‘কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩ মাস’
রুমন ভট্টাচার্য :
নগরীর ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের নবাব সিরাউদ্দৌল্লা রোডের শেঠ প্রপার্টিজের সামনে একটি বক্স কালভার্টের উন্নয়ন কাজের জন্য পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দু’পাশের চলাচল রাস্তা। দু’সপ্তাহ আগে একপাশ বন্ধ করে কাজ করা হলেও এখন উভয় পাশে চলছে কাজ। ফলে উভয় পাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যান ও পথচারী চলাচলে বেড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। অগত্যা যান চালকদের ব্যবহার করতে হচ্ছে বিকল্প পথ।
ঠিকাদার সূত্রে জানা যায়, বক্স কালভার্টটির নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগতে পারে প্রায় তিন মাস। এ সময় পর্যন্ত সব ধরনের যান ও পথচারীদের চলাচল একবারেই বন্ধ থাকবে ওই রাস্তায়। ব্যবহার করতে হবে বিকল্প পথ। তবে চসিকের দাবি দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে শেষ করা যাবে কাজ।
যানচালক ও পথচারীরা বলছেন, কালভার্টটির একপাশের কাজ শেষ করে অন্য পাশে কাজ করলে দুর্ভোগ অনেক কম হত। তবে চসিকের দাবি অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু পানি চলাচল বন্ধ করতে না পারায় দু’পাশ ভেঙেই কাজ করতে হচ্ছে। এতে সামান্য কিছুদিন কষ্ট হলেও পরে সুফল মিলবে। আর ঠিকাদার বলছেন এভাবে একপাশ ধরে কাজ করতে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের দ্বিগুণ লাগবে।
সরেজমিন দেখা যায়, কালভার্টের দু’পাশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে গ্যাস লাইনে পাইপের ওপর হেঁটে পার হচ্ছে। চিটাগং ফুডসের আগে এবং প্যারেড কর্নারের মুখে ব্যারিকেড তৈরি করে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর থেকে চকবাজার আসা বিভিন্ন পরিবহনগুলোকে লালচান্দ রোড হয়ে কলেজ রোড এবং কোতোয়ালী-আন্দকিল্লা হয়ে আসা গাড়িগুলো রসিক হাজারী লেইন ও কলেজ রোড ব্যবহার করছে। এর ফলে এসব রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
মো. রাশেদ ও জসিম নামের দুইজন পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনোরকম পূর্বঘোষণা ও বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এভাবে উভয়পাশের রাস্তা বন্ধ করে কাজের কারণে চলাচলে ভোগান্তি যেমন বেড়েছে তেমনি গাড়িচালকরাও এ সুযোগে বিকল্প পথের অজুহাতে বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে।’
কাজ তদারকির দায়িত্ব থাকা একজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ঠিকাদারের ছোট ভাই জুনায়েদ আবদুল্লাহ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নে আলিফ ট্রেডিং কাজটি করছে। ঠিকাদার আমার বড় ভাই, নাম এহসান। প্রকল্পের মেয়াদ তিন মাস। একপাশ একপাশ করে কাজ করতে গেলে সময় লাগবে ৬ মাস। তাই দু’পাশ একসাথে করা হচ্ছে যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যায়। এজন্য সিএমপির কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে।’ তবে তার কাছ থেকে ঠিকাদারের নম্বর চাইলে তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প কাজের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কালভার্টটির মাঝে কিছুই নেই। অনেক পুরনো এটি। নিচে পাইপ থাকার কারণে খালের পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে কালভার্টটির উপরে পানি উঠে পড়ে। আমরা গত দু’সপ্তাহ ধরে একপাশ ধরে কাজ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনোভাবেই পানি চলাচল বন্ধ করতে পারছি না। সে কারণে সিএমপি’র কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দু’পাশ ভেঙে কাজ করতে হচ্ছে। দেড় ফুট উঁচু করা হবে এই কালভার্টটি।’
১ নম্বর টেম্পোচালক হারাধন নাথ বলেন, ‘এভাবে হুট করে দু’পাশের রাস্তা বন্ধ করে কাজ করার কোনো মানে নেই। একপাশের কাজ শেষ করে অন্যপাশে করলে আমাদের কষ্ট কম হতো। এখন বিকল্প পথ ব্যবহার করতে গিয়ে যাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে এবং যানজটে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
প্রায় একই কথা বলেন ১ নম্বর বাসচালক মো. জসিম।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ চলাচলে দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আশা করছি দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে কালভার্টটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারব। এ প্রকল্পের কালভার্টটির কাজ ছাড়া আরো অনেক কাজ রয়েছে। জনগণের জন্যই কাজটি করা হচ্ছে। বর্তমানে একটু ভোগান্তি হলেও পরবর্তীতে উপকার হবে।’