আজিজুল কদির :
প্রতিবছর কোরবানির আগে দা-ছুরি নিয়ে কামারবাড়ির দিকে ছুটলেও এবার মহামারি করোনার ঘা পড়েছে কামারের হাপরেও। আগের কোরবানি মৌসুমের মতো কামারের ব্যস্ততাও নেই। ফলে অন্যবারের মতো কামারদের মৌসুমি আয়েও টান পড়েছে। এর অন্যতম কারণ এবার কমেছে কোরবানিদাতার সংখ্যাও।
অন্যান্য বছর এ সময়টাতে অনেক কামারদের ব্যস্ততা থাকত নতুন দা-বটির অর্ডার, পুরনো অস্ত্রে শান দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে। কিন্তু এ বছর নেই নতুন দা-বটি-ছুরির অর্ডার, পুরানো হাতিয়ার শান দিতেও আসছে কেউ- এসব কথা জানালেন গত ৪৫ বছর ধরে এই ব্যবসায়ে জড়িত নগরীর চকবাজার আব্দুল মুন্সেফ লেইনের শিমুল কান্তি দাশ।
তিনি জানান, বিগত বছরগুলোতে কোরবানির চাঁদ উঠলেই এই ব্যবসায় অতিরিক্ত লোক খাটাতে হতো। বেচাকেনাও হতো যথেষ্ট। ঈদের আয় দিয়ে বছরের ১১ মাস চলে যেত। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের মানুষের হাতে টাকা না থাকায় ঈদে তেমন বেচাকেনা নেই। শহরে অনেকেই ২-৩টা গরু কোরবানি দিতো। এবার একটি গরুর ভাগ দেওয়ার সামর্থ্যও নেই অনেকের।
নগরীতে সরেজমিনে দেখা গেছে চকবাজার. রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গী বাজার, বকসির হাট, জেল রোড, কদমতলী, আমতল এলাকায় দোকানগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই।
বহদ্দারহাটের কামার শিবু কান্তি সুপ্রভাতকে ক্ষোভের সাথে জানান, পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে যা কামাই করি তা দিয়ে সংসার চলে না। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার বিশেষ সুযোগ সুবিধা চালু করলে উপকৃত হতাম। কেননা সারা বছরই শত শত কামার সম্প্রদায়ের লোক এ সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
চকবাজারের কামার জয় রাম নন্দী সুপ্রভাতকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার কাজ কম। মানুষ পুরোনো জিনিস খুব কম সংস্কার করছেন। গতবছর যেখানে দৈনিক ৪-৫ হাজার টাকা আয় হতো, সেখানে এ বছর আয় হচ্ছে দৈনিক ১-২ হাজার টাকা।
নগরীর বহদ্দারহাটে ছুরি ও দা বানাতে এসে বাকলিয়ার মো. আবদুস ছবুর সুপ্রভাতকে বলেন, কোরবানির জন্য নতুন দা-বটির প্রয়োজন। দেড় হাজার টাকায় দুটি বড় দা বানালাম। ছোট ছুরিও নিয়েছি কয়েকটা। গতবারের চেয়ে এবার দাম বেশি বলে জানান তিনি।
দোকানগুলোতে লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহা ৩২০ টাকা, সাধারণ ১৫০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা, দা ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ টাকা, বটি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ও চাপাতি ৬০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।