বছরের পর বছর পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ। এর ফলে হ্রদটি হারিয়ে ফেলছে নাব্যতা। গভীরতা কমায় বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে দ্রুত কমে যাচ্ছে হ্রদের পানি। হ্রদে মাছ উৎপাদন কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মৎস্য গবেষক ও কর্মকর্তারা। হ্রদটি ব্যবহার করা হচ্ছে যত্রতত্রভাবে। ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মৎস্য বিচরণ ক্ষেত্র ও আবাসস্থল। উদ্বেগজনক হারে হ্রদে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ বছর বর্ষা শেষ না হতেই হ্রদে পানি স্বল্পতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বছরের পর বছর পাহাড়ি ঢলে নামা পলি জমে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া হ্রদের উভয় তীরে অব্যাহত ভাঙনসহ প্রতিদিন শত শত মেট্রিকটন বর্জ্য নিক্ষেপ করা হচ্ছে হ্রদে। এসব কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে হ্রদটি। এ অবস্থায় কাপ্তাই হ্রদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে হ্রদে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ উভয় তীরে সড়ক নির্মাণের জন্য সরকার গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। দীর্ঘ ৫৬ বছরে একবারও ড্রেজিং না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় যে হারে পাহাড় কাটা চলে এবং বনজসম্পদ ধ্বংস করা হয়ে থাকে তা চলতে থাকলে ড্রেজিং করা হলেও অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আবার রাতারাতি হ্রদ ভরাট হয়ে যাবে। এতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও তা জলে ভেসে যাবে। কাজেই হ্রদটি ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিতে হলে পাহাড় কাটা ও অবাধ বনজসম্পদ ধ্বংস বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাহাড়ে জুম চাষের বিকল্প উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়নেও জনসচেতনতার পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব সমূহ আপদ সরিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে কাপ্তাই হ্রদ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মহাপ্রকল্প।
একটা সময় ছিল যখন কাপ্তাই হ্রদকে বলা হতো মৎস্য উৎপাদন ভা-ার। কিন্তু হ্রদের গভীরতা কমায় এবং পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হ্রদ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটা সময়ে মালয়েশিয়ার কৃত্রিম হ্রদ ‘লেক কেনিয়র’ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল জীববৈচিত্র্য। এরপর সেখানে জাহাজের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা চালিয়ে মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। এবার সেই হ্রদের আদলে গবেষণা শুরু হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই লেকে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উদ্যোগে তৈরি ও পরিচালিত এ জাহাজের নাম দেওয়া হয়েছে-‘সিভাসু রিসার্চ ভেসেল’।
শেষ পর্যন্ত হ্রদ খননের সংবাদ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে রাঙামাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ইতোমধ্যে জেলার ছয়টি খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রাখা রয়েছে। হ্রদের পানি কমলে আবারো কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, নতুন আরো ২৫টি খাল খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই সে সব খাল খননের কাজ শুরু হবে।
জেলা নদী রক্ষা ও কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, হ্রদে নাব্যতা ফেরাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দ্রুত কাজ শুরুর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে। হ্রদের দখল বন্ধে সকলের সহযোগিতা কামনা এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মতামত সম্পাদকীয়