আমাদের দেশে রয়েছে বিশাল জনসম্পদ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৯১১ জন। তার মধ্যে ১৫-৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম শ্রমশক্তির সংখ্যা হলো ১১ কোটি ৭ লাখ প্রায়, যা মোট জনসংখ্যার ৬৫.২৩ শতাংশ। এর অর্থ দেশ আজ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধার মধ্যে যাচ্ছে। জনমিতিক লভ্যাংশ হচ্ছে যখন কর্মক্ষম জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বেশি থাকে। তখন ওই দেশ জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা ভোগ করে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। জনমিতির হিসাবে, বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকে জনমিতিক লভ্যাংশের যুগে প্রবেশ করে এবং তা ২০৪০ সাল পর্যন্ত বহমান থাকবে।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে তরুণদের এই বিপুল অংশ যেকোনো দেশের জন্য বড় সম্ভাবনা সুযোগ হিসেবে গণ্য হবে, যদি সেই দেশের কর্মক্ষম প্রতিটি মানুষকে উপযুক্ত কাজ দেওয়া যায়। বিশেষ করে প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশ করে এমন তরুণদের যদি ঠিকঠাকমতো কাজে লাগানো যায়।
গত শতকের ষাট ও নব্বইয়ের দশকে হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির সুবিধা নিয়ে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে জনমিতির এ সুবিধা কাজে লাগানোর এখনই সময়। কেননা জনমিতির এ সুবিধা বেশি দিন থাকবে না। গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে।
দেশে বিপুল কর্মক্ষম জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তাঁদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করা প্রয়োজন। তা না হলে বাংলাদেশ বর্তমানে যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতি কাজে লাগানোর যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা দায় হয়ে উঠতে পারে।
উন্নত দেশে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশকে ২০৩১ সাল নাগাদ প্রতিবছর ১৯ লাখ ৩০ হাজার কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কীভাবে কর্মক্ষম বিশাল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া সময়ের প্রয়োজন।
বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে জনসম্পদ হতে পারে সর্বোত্তম অস্ত্র। আর সঠিক অস্ত্র উপযুক্ত সময়ে নির্ধারিত জায়গায় প্রয়োগ করতে পারলেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। যদিও ইতিমধ্যে সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তবু কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর যেসব খাতের সর্বাধিক গুরুত্ব রয়েছে, সেখানে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। বিশেষ করে সনদনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে বাস্তবমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা হওয়া উচিত দক্ষতানির্ভর ও বাজারমুখী।
এ মুহূর্তের সংবাদ