কর্ণফুলী নদীর তীর ইজারা নিয়ে মন্ত্রী তাজুলের প্রশ্ন

সার্কিট হাউসে আলোচনা সভা :


নিজস্ব প্রতিবেদক »

নগরজুড়ে সড়ক কাটাকাটি বন্ধ রেখে সার্ভিস লাইনগুলোর জন্য ডাক্টলাইন (সার্ভিস লাইন নেয়ার জন্য রাস্তার একপাশে ডেডিকেডেট বক্স লাইন) চালুর নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। একইসাথে কর্ণফুলীর নাব্যতা রক্ষায় নদীর তীর ইজারা দেয়া বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

নগরজুড়ে সড়ক কাটাকাটি বন্ধে সার্ভিস লাইনগুলোর জন্য ডাক্টলাইন চালুর নির্দেশ

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসেগতকাল সকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আয়োজিত কর্ণফুলী রক্ষা, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনাসভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।

যে কোন মূল্যে নদীর দখল-দূষণ বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীর পাড় লিজ দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ কেন দিচ্ছেন আমি জানি না। মহিউদ্দিন (্প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী) সাহেব চট্টগ্রামের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতেন। তাঁর মধ্যে বেসিক দেশপ্রেম ছিল।

মন্ত্রী চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের ইকোনমিক হাব উল্লেখ করে বলেন, এখানের সমুদ্রবন্দর গড গিফটেড। আমাদের প্রাকৃতিক অনেক সুযোগ রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকার পাঁচটি নদী ও কর্ণফুলীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, অবৈধ দখল ও দূষণ বন্ধে কাজ করছি। ঢাকার বাইরে এটি প্রথম সভা। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর প্রস্তাবে সভাটি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।

চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেই সাথে অর্থও বরাদ্দ দিচ্ছে। প্রয়োজনে আরো দেয়া হবে।

উন্নয়কাজে সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্লুইস গেইট কিংবা ব্রিজ-কালভার্ট বাস্তবসম্মত না হলে জলাবদ্ধতা বাড়বে। উন্নয়নের জন্য সবাইকে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধেরও আহবান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর সেই বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ট্রাক চলাচল করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা দিয়ে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে তো কেউ পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ফ্রি দেয় না। তাই উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে সমন্বয়হীনতা বিষয়ে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, সমন্বয়হীনতা দূর করতে আমি নিজে সামনে থেকে কাজ করছি। আজকের সভায় আমার ডাকে সাড়া দিয়ে সবাই এসেছেন। চট্টগ্রামের সকল উন্নয়ন সমন্বয়ের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হবে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। শিগগিরই এর সুফল পাওয়া যাবে।

মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করা যায় কিনা তা নিয়ে একটি সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষার পর পরিকল্পনা করা যাবে। আর এটি বাস্তবায়ন করা গেলে অনেক পাঁচ তারকা হোটেল গড়ে উঠবে। এতে শুধু চট্টগ্রামের পর্যটন খাত দিয়েই দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে।

সুজনের প্রশংসা করলেন মন্ত্রী

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক তাজুল ইসলামের প্রশংসা করে বলেন, আমাদের বর্তমান প্রশাসক প্রতিনিয়ত রাস্তায় অবস্থান করছেন। এখন দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে। আগে চট্টগ্রামের সড়কগুলোর যে দুরাবস্থা ছিল এখন ধীরে ধীরে তা কেটে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য পাওনা পাবে না তা কি করে হয়, বর্তমান প্রশাসক তা দেয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার,  নৌসচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সঞ্চালনায় গতকাল সাড়ে ১০টায় সভা শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল চারটায়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, চসিকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।