চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধনাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ মিনিটের বক্তব্যে তিন দফায় উঠে এসেছে কর্ণফুলী নদী রক্ষার বিষয়টি। দূষণের হাত থেকে নদীটিকে রক্ষা করতে সকল শিল্পকারখানা থেকে পরিশোধন ছাড়া কোনো বর্জ্য যাতে কর্ণফুলী নদীতে না মিশে সে বিষয়ে তদারকি করতে বলা হয়েছে। একইসাথে হালদা, সাঙ্গুসহ বাকি নদীগুলো যাতে দূষিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’ এর ভার্চুয়াল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে সারাদেশের উন্নয়ন হবে। একসময় অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের ৭৫’ পরবর্তী যেসকল সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তারা সবকিছুই ঢাকা শহরে নিয়ে আসে। ফলে চট্টগ্রাম অনেকটা অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে চট্টগ্রাম আবার প্রাণ ফিরে পায়। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প সবদিক থেকেই যেন আরও উন্নত হয় সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের কাজ চলমান আছে। এভাবে চট্টগ্রামকে সার্বিকভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া মিরসরাই, মহেশখালী, কক্সবাজারের সাবরাংয়ে শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া মিরসরাই শিল্পনগর থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে বেশকিছু কাজ এগিয়েছে।’
মেরিন ড্রাইভের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে সাগরের জলোচ্ছ্বাস থেকে শহর যেভাবে রক্ষা পাবে তেমনিভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশেও এই মেরিন ড্রাইভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নে অবস্থিত চট্টগ্রাম ওয়াসার মেগা প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিকে চট্টগ্রাম প্রান্তে (পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকোশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীর পানির সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে ফেইজ-১ ২০১৭ সালে উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া দিনে ৯ কোটি লিটার উৎপাদনক্ষমতার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং কাফকো সিইউএফএলসহ শিল্পএলাকায় পানি সরবরাহের জন্য ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ২০১৭ সালের ১২ মার্চ কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের ফেইজ-১ উদ্বোধনের সময় কর্ণফুলী নদী রক্ষায় এবং এসডিজি নিশ্চিতকরণের জন্য চট্টগ্রামে আরও ৫টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ প্রকল্প দেওয়া হয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আরও ৫টি পয়ঃশোধানাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘আমার অনুরোধ থাকবে বৃষ্টির পানি যাতে সংরক্ষণ করা হয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর থেকে চাপ কমাতে হবে। জলাধার থাকতে হবে। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যখনই আপনারা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধুমাত্র পানি শোধন করে দিবো তা না, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং তা ব্যবহার করা একান্তভাবে দরকার।’
এদিকে ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সমসাময়িক দেশ পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে দেখি অর্থনৈতিক সকল প্যারামিটারে আমরা তাদের চেয়ে এগিয়ে আছি। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪১ সালের আগেই উন্নত বাংলাদেশ হবে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর বা জেলা। চট্টগ্রামে ইকোনমিক জোন হচ্ছে। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। সে প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়নের জন্য কি কি প্রয়োজন সেগুলোর সবকিছু নিয়ে সমন্বিত প্রজেক্ট করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছেন। এত বড় প্রকল্পে সুপেয় পানির যোগান দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যদি পানির অসুবিধা হয়, তাহলে মেঘনা নদী থেকে পানি আনতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুধু মিরসরাইয়ের জন্য না আরও একশটি ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে; সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার উৎপাদন ক্ষমতার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ বাস্তবায়নে প্রায় ৪ হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটি উৎপাদনে আসায় বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ সক্ষমতা বেড়ে ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হয়েছে। এরফলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীতে আর পানির সমস্যা থাকবে না।