চট্টগ্রামে মার্চের প্রথম ১২ দিনে শনাক্ত ১২৯২ রোগী
সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণে নির্দেশনা আসতে পারে
আজ থেকে মাঠে নামছে জেলা প্রশাসনের ছয় টিম
কাঁকন দেব <<<
করোনার সংক্রমণের ধারা আবারও ঊর্ধ্বমুখী। চট্টগ্রামে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ কম থাকলেও মার্চ থেকে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৮৫৯ জন। অথচ মার্চের প্রথম ১২ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১২৯২ জন। এছাড়া চলতি মাসের প্রথম সাতদিনে করোনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এটিকে করোনার প্রকোপ বাড়ার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে নগরবাসীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। সব ধরনের অনুষ্ঠান চালু রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ছুটির দিনে নগরের বিনোদন স্পটে ভিড় বাড়ছে। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েতে হাজারো মানুষের সমাগম হচ্ছে। খুব কম সংখ্যাক মানুষ মাস্ক পরছেন।
নগরের জামালখানের ডা. খাস্তগীর স্কুলের সামনে, ২ নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যান, ফিরিঙ্গীবাজারে অভয়মিত্র ঘাট ও সিআরবিতে বিকাল হতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ দলবেঁধে আড্ডা দিতে দেখা যায়। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই।
মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে নগরীর অভয়মিত্র ঘাটে সাইফুল আমিন নামে এক তরুণ বলেন, ‘এতোদিনে যখন কিছু হয় নাই, সামনে কিছু হবে না। মাস্ক পরলে হাঁসফাঁস লাগে’
দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। একই বছরের ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। একই বছর ৩০ জুন একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। গত বছরের জুন-জুলাই মাসে দেশে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। ওই সময় প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছিল।
চট্টগ্রামে গত ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। চট্টগ্রামে একই বছরের ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৪৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এদিকে চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১১ এপ্রিল। চট্টগ্রামে করোনায় এ পর্যন্ত ১৮ চিকিৎসকসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭৮ জন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় টানা তৃতীয় দিনে (১২ মার্চ ) ২৪ ঘণ্টায় হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দৈনিক শনাক্তের হার আবার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ যদি সংক্রমণ পাঁচের নিচে থাকে, তখন বোঝায় যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আর নেই। তখন হয়ে যায় গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ বা ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন। কিন্তু, যদি আবার সংক্রমণের হার বেড়ে পাঁচের বেশি হয়ে যায়, তখন আবার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে চলে যাবে। যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আবারও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলা যেতে পারে।
করোনা সংক্রমণ বাড়ছে স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণ, মাস্ক না পরলে জরিমানা, গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব এসব বিষয়ে প্রশাসনকে জোরালে ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বাড়ায় আগের মতো সব হাসপাতালকে প্রস্তত রাখা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ছয়টি টিম শনিবার থেকে নগরে কাজ করবে । করোনার বিষয়ে সচেতনতা, মাস্ক পরিধানসহ গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নজরদারি করবে।’
সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণ বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও অনুষ্ঠানের কোনো ধরনের অনুমতি নেই।’
কাল (আজ শনিবার) মন্ত্রণালয়ের একটি সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। করোনার সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকসমাগমের বিষয়ে নতুন গাইডলাইন আসতে পারে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনা পরিস্থিতি
চট্টগ্রামে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন। গত বৃহস্পতিবার ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, শেভরন, ইম্পেরিয়াল, আরটিআরএল, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ১৯৯৬ নমুনার মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে ১৩১ জনের। এতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ১৭৮ জন। অপরদিকে বৃহস্পতিবার করোনার টিকা নিয়েছেন ৮ হাজার ২৪৮ জন। এদের মধ্যে শহরের ৫ হাজার ৫৭০ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ২ হাজার ৬৭৮ জন। এতে এপর্যন্ত ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩১৮ জনের ভ্যাকসিন দেয়া হলো। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯৯৭ জন।
সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ৯৪০ নমুনার মধ্যে ১৭ জন করোনা পজিটিভ হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ নমুনায় ৭ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ৫৮১ জনে ৩২ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১০০ জনে ২৪ জন, শেভরনে ২৩৬ নমুনায় ১৭ জন, আরটিআরএল ল্যাবে ১৫ জনে ৪ জন এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ২০ জনের নমুনায় ১১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ১৪ জনের নমুনায় কারো পজিটিভ পাওয়া যায়নি।