দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার ৮টা পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে যা গত ৪৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, শীত মৌসুমে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে মর্মে সরকার থেকে বলা হলেও ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা শনাক্ত কম ছিল বরং মার্চ মাসের শুরু অর্থাৎ গরমের মৌসুমে তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের উচিত এর কারণ নির্ণয়ে গবেষণা করা। দেশে এ পর্যন্ত ষাটোর্ধ্ব’ বয়সীদের মৃত্যুর হার ৫৬ শতাংশ, নারীর মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এ পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজারের মতো, মৃত্যু ৮ হাজার ৪৪১ জন।
এতদসত্ত্বেও মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে অনীহা দেখা যাচ্ছে। সরকার থেকেও সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা এবং অভিযান পরিচালনা কমেছে। এই পরিস্থিতি করোনার জন্য খুবই বিপজ্জনক, সমাজ-অর্থনীতি চালু রাখতে মাস্ক পরিধান, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে শিথিলতা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের নিকট অতীতের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ এবং প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হলেও আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। কেননা বিশ্বে এখনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কখন মহামারির অবসান হবে কেউ বলতে পারছেনা। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে এখনও লকডাউন রয়েছে। বিমান যোগাযোগ এখনও আংশিক পর্যায়ে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা নিয়েও মানুষ উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি তারই ইঙ্গিত বহন করে। অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি পালনে অধিক যতœবান হতে হবে। করোনার এই সময়ে পরিবেশ দূষণ ও খুবই ক্ষতিকর এবং তা করোনা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনের আশু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। আমাদের এখন টিকা সরবরাহকারী মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতাও আছে। গত ১ মাসে টিকা নিলেন প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ টিকার আওতায় এলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে-এটা বলা যেতে পারে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে জানা যায়, টিকা নিতে অনাগ্রহ রয়েছে মানুষের আর টিকা গ্রহণ নিবন্ধন পদ্ধতিও সহজ নয়। নারীদের টিকা গ্রহণের হার তুলনামূলক কম। অনেকের ন্যাশনাল আইডি নেই। এ রূপ পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকের সাহায্যে সরাসরি মানুষদের টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। টিকা নিয়ে নানা গুজব অপপ্রচার এখনও রয়েছে। টিকা প্রদান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রচার অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন। পবিবেশ দূষণ রোধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করতে হবে। আমাদের সীমিত সম্পদ নিয়ে অধিক জনসংখ্যার দেশ। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন। সেই সাথে মানুষ যাতে স্বল্পসময়ে টিকার আওতায় আসতে পারে সে জন্য সংগ্রহ, বিতরণ-ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ঘটাতে হবে। ভ্যাকসিন নিয়ে যাতে কূটনীতি না হয় সে ব্যাপারে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়