করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, গত ১ সপ্তাহে শনাক্তের হার ৮ শতাংশের বেশি। গত বৃহস্পতিবার শনাক্ত ২১৮৭ জন, যা গত ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি সপ্তাহের প্রথম ৪ দিনেই মারা গেছেন ৮১ জন। গত ১ বছরে প্রতিদিন ২৩ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা করোনার বর্তমান পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আলামত বলছেন।
দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ১০ থেকে ১২টি বিষয় বিবেচনা করতে বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে লকডাউন না হলে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সমন্বয় রেখে জনসমাগম বন্ধ করা; কাঁচাবাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করা।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে আগামী ১ সপ্তাহের পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করা, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন, রোগীদের সংস্পর্শেআসাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা, বিদেশ থেকে আসা লোকজনদের ১৪দিনের কঠোর কোয়ারেন্টাইনে রাখা, ঈদের ছুটি সংকোচন, সব ধরণের সভা ভার্চুয়াল করা, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন আরো জোরালোভাবে কার্যকর করা, পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করা ইত্যাদি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ভ্রমণে যাওয়া লোকজনের মধ্যে সংক্রমণ বেশি- এটা লক্ষ্য করা গেছে।
হাসপাতালগুলিতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা শীতকালে সংক্রমণ বেশির কথা বললেও তা হয়নি বরং গরমকালের শুরু থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত প্রতিরোধ কিংবা প্রস্তুতিতে কোনোরূপ শৈথিল্য কাম্য না হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। এখন কোভিড হাসপাতালগুলি অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। চিকিৎসাসেবার জন্য ডাক্তার, নার্স, কর্মী, স্বেচ্ছাসেবকদের আগের ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো, অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যাপ্তভাবে করতে হবে।
করোনার নতুন ধরণের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ভাইরাসের নতুন ধরণ- দেশে প্রবেশ করতে না পারে। সরকারের টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে, তবে টিকা নিতে অনাগ্রহ রয়েছে মানুষের, এ ব্যাপারে সরকারি প্রচার-প্রচারণাও কম। টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবিলম্বে নিতে হবে।
করোনার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন কি মাস্ক পরিধান করার মতো অতিআবশ্যকীয় বিষয়টিরও অবহেলা করা হচ্ছে। প্রশাসনকে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি পালনে জনগণকে বাধ্য করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড ও গ্রামভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থাদি আগের মতোই করার প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে অধিক বরাদ্দ প্রয়োজন। করোনার সময় অন্যান্য রোগের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। নগরীতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করতে হবে। সকল প্রকার পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সংকট মুহূর্তে প্রশাসনের নির্লিপ্ত থাকা বা ‘দেখি কি হয়’-এই প্রবণতা পরিহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালন করে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাতে হবে জীবন জীবিকার স্বার্থেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী যাতে সকল প্রকার সাবধানতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে উদ্যোগ নিতে হবে।
Uncategorized