সুপ্রভাত ডেস্ক »
লকডাউন কিংবা প্রেক্ষাগৃহ খোলার বিধিনিষেধ উঠে গেছে গত আগস্টে। পেরিয়ে গেছে আরও দুটি মাস। কিন্তু করোনা জুজু থেকে এখনও বের হতে পারছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ-ই। আগামী কয়েক মাসেও বড় বাজেটের ছবি মুক্তি দিতে প্রযোজকরা খুব একটা আগ্রহী নন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগ বাজেট ও আলোচিত ৩০টি চলচ্চিত্র এ মুহূর্তে মুক্তির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সাহস দেখিয়েছে শুধু ‘মিশন এক্সট্রিম’ টিম। আগামী ৩ ডিসেম্বর এটি মুক্তির দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগই আগামী বছর নিয়ে ভাবছেন।
দেশের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। তাদের ‘জ্বীন’ ছবিটি গত দুই বছর ধরে মুক্তির অপেক্ষায় আছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘‘জ্বীন’ ছবির বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সবকিছু বুঝে শুনে এটি মুক্তি দিতে চাই। আর মাত্রই করোনার পর হলগুলো চালু হয়েছে। প্রজেকশন মেশিনগুলো ঠিকঠাক করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের আরেকটু সময় লাগবে।’’
অন্যদিকে, বর্তমানে প্রায় ৩০টি ছবি নির্মাণে ব্যস্ত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া। যার বেশিরভাগই স্বল্প ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে। তবে তাদের বড় বাজেটের ছবি হলো শাকিব খান অভিনীত ‘বিদ্রোহী’। দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে সেটিও।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেলিম খান বলেন, ‘‘২ কোটি টাকার ওপরে ‘বিদ্রোহী’ ছবির বাজেট। তাই এখনই ছবিটি মুক্তি দেওয়ার সাহসই পাই না। এখন হলে ছাড়লে বড়জোর ৪০-৫০ লাখ টাকা উঠবে।’’
চলতি বছরের আলোচনায় ছিল বিগ বাজেটের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’। এরমধ্যে প্রথমটির পরিচালক আবু রায়হান জুয়েল জানান, স্কুল-কলেজ পুরোপুরি চালু হলে তবেই সিনেমাটি মুক্তি দেবেন তারা।
অন্যদিকে, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ পরিচালক জানালেন, ছবিটি মুক্তির জন্য আগামী বছরের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।
শুধু করোনা নয়, চলতি বছরের শেষের দুই মাস হবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। ১৪ নভেম্বর এসএসসি ও ২ ডিসেম্বর এইচএসসি শুরু হবে। এই সময়টা নিয়েও ভাবছেন অনেক নির্মাতা।
আলোচনায় থাকা ‘শান’ ছবির পরিচালক এমএ রহিম এমনটাই জানালেন। বললেন, ‘শান’র মুক্তি নিয়ে আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আরও কয়েকটা মাস যাক। কারণ, এখনও করোনার বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। অন্যদিকে, এ বছরের শেষে দীর্ঘদিন পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে। তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বেশ ব্যস্ত থাকবেন। তাই এখন ছবি মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনায় লকডাউন শুরু হলে সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি ছিল ‘শাহেনশাহ’। মুক্তি আটকা পড়ে যায় প্রায় দেড় ডজন নতুন ছবি। চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শকরা। এরপর প্রায় ৭ মাস পর ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুললেও দর্শক আসার নিশ্চয়তা না থাকায় লোকসানের ভয়ে কোনও বিগ বাজেটের ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাননি প্রযোজকরা।
গত বছরের ‘শাহেনশাহ’র ১৯ মাস পর পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে গত ১ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে ‘চোখ’। ৩৮ হলে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি প্রথম সপ্তাহে খুব একটা ভালো ফল দেখাতে পারেনি।
এদিকে, তুলনামূলক কম বাজেটের আরও কিছু চলচ্চিত্র চলতি বছরে মুক্তি পেতে পারে। তার মধ্যে আছে অনুদানের ছবিও। সেই তালিকায় আছে ‘পদ্মাপুরাণ’, ‘যাও পাখি বলো তারে’, ‘আশীর্বাদ’, ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ প্রভৃতি।
যদিও দর্শকরা মূলত তাকিয়ে আছেন সিয়াম-ফারিয়ার ‘অপারেশন সুন্দরবন’, অনন্ত জলিলের ‘দিন: দ্য ডে’, শাকিব খানের ‘অন্তরাত্মা’ (পোস্ট প্রডাকশন চলছে), পরীমণির ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’, মাহির ‘আনন্দ অশ্রু’র মতো ছবিগুলোর দিকে।
এর বাইরে মুক্তির জন্য প্রস্তুত আছে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’, ‘পরাণ’, ‘ক্যাসিনো’, ‘বর্ডার’, ‘মানুষের বাগান’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘কমান্ডো’, ‘ওপারে চন্দ্রাবতী’, ‘সাইকো’, ‘সাহসী যোদ্ধা’, ‘রিকশা গার্ল’, ‘তালাশ’ প্রভৃতি।
কাজ শেষ দিকে আছে ‘অন্তর্জাল’, ‘আদম’, ‘জ্যাম’, ‘গাঙচিল’, ‘গিরগিটি’, ‘আগুন’, ‘সিক্রেট এজেন্ট’, ‘ওস্তাদ’, ‘উন্মাদ’র মতো ছবিগুলো। যার বেশিরভাগেরই প্রযোজক ও নির্মাতা ২০২২ সালে মুক্তির জন্য ধরে রেখেছেন। তবে সেখানেই ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা ধরা দিয়েছে। প্রায় সবাই মুক্তি দিতে চান আসছে বছরে, তাই কতটা ভালো ব্যবসা সম্ভব তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।