কভিড মহামারি দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) উদ্যোক্তাদের প্রায় সবাইকেই করুণ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) গবেষণা জরিপ বলছে, মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। আইএফসির ‘বিজনেস পালস সার্ভে: ইমপ্যাক্ট অব কভিড-১৯ অন এমএসএমই ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত জুন থেকে আগস্টের তথ্য-উপাত্তের আলোকে তৈরি করা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক এমএসএমই প্রতিষ্ঠানে চালানো জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে আইএফসি। মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
আইএফসির তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এমএসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। দেশে এ খাতসংশ্লিষ্ট প্রায় ৯৪ শতাংশ উদ্যোক্তা ক্ষতির শিকার হয়েছে। অন্যদিকে শ্রীলংকার ৯২ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৮৮, ভারতের ৮৬, নেপালের ৮৩ ও পাকিস্তানের ৬৮ শতাংশ উদ্যোক্তা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনের মতে, বাংলাদেশে এমএসএমই খাতে মহামারির কারণে চাকরি হারিয়েছেন ৩৭ শতাংশ কর্মী। বিক্রি কমেছে এ খাতসংশ্লিষ্ট ৯৪ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের। অন্যদিকে খাতটির প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। এতে আরো জানানো হয়, করোনায় বাংলাদেশের এমএসএমই খাতে নারী পরিচালিত উদ্যোগগুলো সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে। নারীদের দ্বারা পরিচালিত ৩৭ শতাংশ এমএসএমই প্রতিষ্ঠান করোনায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে পুরুষ পরিচালিত এমএসএমই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে ২১ শতাংশ।
জরিপকালে ৮০ শতাংশ এমএসএমই প্রতিষ্ঠান লোকসানের মধ্যে ছিল বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আইএফসি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সবচেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কমেছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোয় করোনাকালে গড়ে ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ কর্মঘণ্টা কমেছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় পড়ে পোশাক ও ফ্যাশন খাতের উদ্যোগগুলো। গত বছরের তুলনায় জরিপকালে এসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে ৬৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে এমএসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই কোটি মানুষের। করোনার কারণে বাংলাদেশে খাতটি ভীষণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে খাতটির উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
আইএফসির জরিপে এমএসএমই খাতের ব্যবসাগুলো আগামী ছয় মাস পর্যন্ত খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এ সময়টিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিতে যেমন নেতিবাচক প্রবণতার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তেমনি আরো কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
আইএফসি বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওয়েন্ডি ওয়ার্নার বলছেন, করোনা পরিস্থিতির আগেও বাংলাদেশের এমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে ছিল। মহামারি তাদের চূড়ান্ত সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ, অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপগুলো নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে আইএফসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি খাতটির উদ্যোক্তাদের নীতিগত সহায়তা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে এতে। বাংলাদেশের এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য সাড়ে ৭ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথাও জানিয়েছে আইএফসি।
সরকার ইতিমধ্যে নানাক্ষেত্রে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যা ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগটিকে সঠিক সময়ে সঠিক মিদ্ধান্ত বলে অনেকে আখ্যায়িত করেছেন। অভিজ্ঞমহল মনে করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বাঁচাতে হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়