কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জরিপ মতে, নগরীতে বসবাসরতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। করোনার কারণে কর্মক্ষেত্রে বেতনের টাকা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। যাদের কাছে জমা টাকা ছিল তা-ও শেষ হওয়ার উপক্রম। অনেকেরই সংসার চালানো দায় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব সমস্যার মধ্যে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বাড়ি ভাড়া। নগরীর বেশিরভাগ পাড়া-মহল্লার ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বাড়ির মালিকরা।
করোনাকালে অর্থনৈতিক সংকটে কেউ চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি। কেউ আবার বড় বাসা ছেড়ে উঠছেন ছোট ঘরে। ‘টু লেট’ ঝুলছে এখানে-সেখানে। আর যারা জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে টিকে থাকার চেষ্টায় নগরীতে রয়ে গেছেন, সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সেই ভাড়াটিয়ারা। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সকলেরই একই দশা।
বাড়িওয়ালাদের চাপে তারা দিশেহারা। একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে প্রশাসনের কাছে। বিভিন্ন সংগঠন বাড়ি ভাড়া কমানোর দাবিতে সোচ্চার রয়েছে।
অবশ্য বাড়িওয়ালাদের কেউ কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, অনেকেরই জীবন-জীবিকা এই ভাড়া। ভাড়া না পেয়ে অনেকে কষ্টে দিন পার করছেন। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদগণ এই সংকটে উভয় পক্ষ যেন স্বস্তিতে থাকে তেমন কোনো সমঝোতায় আসার পক্ষে মতামত পোষণ করেন।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময়ে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে বাড়ির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনেক বাড়িওয়ালা সঙ্কটে আয় কমে যাওয়া ভাড়াটিয়াদের বাসা ছাড়তে বাধ্য করছেন বলে খবর শুনে গতকাল শনিবার নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।
বাড়িওয়ালাদের অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ কথা সত্য যে, কোনো কোনো বাড়িওয়ালা আছেন ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়ই তাদের একমাত্র উৎস। আবার তার উপর ব্যাংক লোনও থাকতে পারে। তাই আমি পরিস্থিতি বিবেচনায় দু’পক্ষকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এই সঙ্কটকালে ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখারও আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে কারণ নগরে বসবাসকারী ভাড়াটিয়ারা যেমন অসহায় অবস্থায় পড়েছে তেমনি কিছু কিছু বাড়িওয়ালা যাদের শুধু ভাড়ার টাকায় সংসার চালাতে হয় তারা পড়েছে বিপাকে।
বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। সামর্থবান বাড়িওয়ালারা এ ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিতে পারেন। এই সময়ে কিছু ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটিয়াদের ওপর থেকে চাপ কমাতে পারেন। পুরো বিষয়টি একটি সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধে কোনো ধরনের সংঘাত তৈরির সম্ভাবনা থাকবে না।