নিজস্ব প্রতিবেদক »
কনটেইনার পরিবহনে ইতালি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। ৯৫২ একক কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেল এমভি সোঙ্গা চিতা। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার পরিবহন শুরুর পর এই প্রথম সরাসরি ইতালির উদ্দেশ্যে পরিবহন শুরু হলো। এই ধারায় আগামীতে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও কেউ সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু করতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাপোর্ট থাকবে।
এই সার্ভিসের জন্য স্পেশাল জেটি সুবিধা দেয়া হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে কেউ রপ্তানি পণ্য নিতে সরাসরি কোনো দেশে জাহাজ চালু করতে চাইলে অগ্রাধিকার দেবো।’
ইতালিতে কেন সরাসরি জাহাজ?
বাংলাদেশের পোশাক কারখানা থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন ইতালির পোশাক ক্রেতারা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দরে নিতে হয়। করোনার পর এই বন্দর দুটিতে কনটেইনারের খুব চাপ। আবার সময়ও বেশি লাগছে এবং খরচও বেড়েছে স্বাভাবিকের চাইতে পাঁচগুণ। ইতালিতে কনটেইনার পৌঁছতে ৪৮ থেকে ৫০ দিন সময় লেগে যেতো। চট্টগ্রাম থেকে নিজেদের খরচে যেহেতু তারা পণ্য নিচ্ছেন, মাথাব্যথাও ছিল তাদের বেশি। প্রায় ছয় মাসের বেশি এমন দুর্ভোগের পর ইতালির পোশাক ক্রেতার আহ্বানে সামনে এগিয়ে আসে তাদেরই দেশের ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানি রিফ লাইন। এটির সহযোগী কোম্পানি ‘ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন’ এ সেবা চালু করে।
রিফ লাইনের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান রিফলাইন ওয়াল্ডওয়াইড লজিস্টিকস লিমিটেডের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই জাহাজটি ইতালির রেভেনা বন্দরে কনটেইনার নামিয়ে আবার রপ্তানি পণ্য নিতে বন্দরে আসবে। এরপর প্রতি ২২ দিন পর জাহাজ রপ্তানি পণ্য নিতে ভিড়বে এই বন্দরে।
জাহাজটি কর্ণফুলী ছেড়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরের সামনে দিয়ে গিয়ে আরব সাগর, ভারত মহাসাগর, গালফ অব এডেন, লোহিত সাগর, সুয়েজ খাল ও ভূমধ্যসাগর হয়ে পৌঁছাবে ইতালির বন্দরে। আর এতে ১৬ দিন সময় লাগবে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই রুটে আমাদের দুটি জাহাজ চালু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই দুটি জাহাজ আসা যাওয়া করবে।
এদিকে জাহাজটিকে বিদায় দিতে গতকাল বন্দরের জেটিতে উপস্থিত হন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে। জাহাজটি বন্দর ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত জেটিতে অপেক্ষারত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এসময় তিনি বলেন, এটা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি বিশাল মাইলফলক। কোনো ধরনের বাধা ছাড়া সরাসরি বিদেশের কোনো বন্দরে পণ্য নিয়ে যাওয়া।
কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য না আনা হলে এই জাহাজ সার্ভিস লোকসান হতে পারে। এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইউরোপ থেকে জাহাজটি আসার সময় পথের বিভিন্ন বন্দরের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। আর যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি ফেরত যাবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ পোশাক শিল্পের। তাই এসব রপ্তানি পণ্য দ্রুত ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।