যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা নয়
কর আদায়ে নতুন খাত বের করার নির্দেশনা
জলাবদ্ধতা নিরসনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলমান
৮ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, টানেল চালু হলে নগরের গুরুত্ব যেমন বেড়ে যাবে তেমনি যানবাহনের চাপও বৃদ্ধি পাবে। এ বিবেচনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকভাবে সাজাতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার যে সংস্কৃতি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তা দূরীকরণে কঠোর হতে হবে। সেলক্ষ্যে সরকার কর্তৃক প্রণীত ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১’ এর মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চসিক বাধ্য হবে। এজন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং এর মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরপরও যদি বিষয়টি কেউ অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জরিমানা, জেল বা উভয় দণ্ড প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের যে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে তার আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ডের নালা নর্দমার মাটি উত্তোলন, পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য পুরোদমে কাজ অব্যাহত রয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল ১৮টি ওয়ার্ডে একযোগে চসিকের বিশেষ দলের মাধ্যমে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলেছে।
তিনি গতকাল সকালে আন্দরকিল্লা পুরাতন নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছাত্তার মিলনায়তনে চসিকের ৬ষ্ঠ পরিষদের ১৭তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন।
চসিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মো.গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোবারক আলী, পানি ও বিদ্যুৎ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. মোর্শেদ আলম, অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইসমাইল, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসেম, প্রমুখ।
মেয়র আরো বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নগরীকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নগরে কোরবানির দিন থেকে আরো তিন দিন যাতে উপজেলা থেকে জবাইকৃত পশুর চামড়া নগরীতে প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে চামড়া ব্যবসায়ী, লবণ ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সাথে যৌথ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠান করে উপজেলা পর্যায়ে চামড়া লবণজাত করে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হবে। নগরবাসীর পশুর বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার সুবিধার্থে ১ লাখ পলি ব্যাগ সরবরাহ করা হবে জানিয়ে বলেন, আমরা চাই গত বছর কোরবানির বর্জ্য অপসারণে চসিক সারা দেশে যে সুনাম অর্জন করেছে তা থেকে যেন আরো উত্তরণ করতে পারা যায় সে প্রচাষ্টা চালানো হবে।
তিনি সরকারের রূপকল্প ২০৪১ এর সাথে মিল রেখে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এই মাস্টার প্ল্যানে চসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে এস.টি.এস (সেক্টন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) ও টিজি স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেয়ার হয়েছে।
তিনি বলেন, নগরীতে ইমারত বা টাওয়ার নির্মাণ করতে গেলে যে প্ল্যান অনুমোদন দেয়া হবে তাতে সিটি কর্পোরেশন থেকে ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। তা না হলে নগরীর জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তা নিরসন সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের জন্য ১৩৭০ কোটি টাকা এবং নগরের সামগ্রিক সড়ক ও যোগাযোগ উন্নয়নে ২৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। ২৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কাজের তালিকা সংগ্রহ করে এবং তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সততা, জবাবদিহিতা ও কাজের গুণগত মান অক্ষুণ্ন রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বহির্ভূত ২১টি খাল চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেন।
মেয়র নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অপরিকল্পিতভাবে যাদের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাতে সৌন্দর্যবর্ধনের চাইতে সৌন্দর্য হানি হয়েছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন না করায় চুক্তি বাতিল করা হয়েছে এবং আরও বাতিল করা হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
মেয়র টাইগারপাস চত্বরটি পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইউসুফ চৌধুরী নামে নামকরণের বিষয়টি সাধারণ সভায় অনুমোদন লাভ করায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পত্র প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নগরীতে জলজটের কারণে রাস্তা ও নালা একাকার হয়ে পূর্বে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ যে সেবা সংস্থাই কাজ করুক না কেন সে সব জায়গায় নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের দায়িত্ব চসিক প্রকৌশল বিভাগকে নিতে হবে। ভবিষ্যতে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনা যাতে না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন। তিনি রাজস্ব বিভাগকে গতিশীল করার আহবান জানিয়ে বলেন, মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৬টি খাতের উপর কর আদায়ের নীতিমালা থাকলেও চসিকের এ পর্যন্ত কয়েকটি খাত ছাড়া বাকি খাতগুলো থেকে করের আওতায় আনতে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা খতিয়ে দেখে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তি