নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
নান্দনিক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত জুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এ ভাঙনের কবলে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টও পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। ফলে পর্যটনের জন্য শ্রীহীন হতে পারে সৈকত এলাকা। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভের বিভিন্নস্থানে সড়কের সাথে সাগরের ঢেউ আঁচরে পড়ছে। জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে উত্তরের সমিতিপাড়া পর্যন্ত এবং মেরিন ড্রাইভের বান্টু মিয়ার কামার, হিমছড়ি, ইনানী, মনখালী, পাটুয়ারটেকসহ সড়কের বিভিন্ন এলাকায় সৈকতের ভাঙন দেখা দেয় গত ৪/৫ বছর ধরে। যেখানে অসংখ্য ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া হিমছড়িসহ সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বেশক’টি স্থাপনাও সাগরের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। লাবণী পয়েন্টের ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্কও সাগরে তলিয়ে যাওয়ার পথে। কিন্তু গত বুধবার পূর্ণিমার জোয়ারে সৈকতে পর্যটকের কাছে সবচেয়ে প্রিয় লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গত তিনদিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাঙনের আকার দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ঢেউয়ের আঘাতে বেশ কয়েকটি জিও ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে।
কবিতা চত্বর থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত অনেক ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। জিও ব্যাগেও রক্ষা হচ্ছে না। ভাঙনের তীব্রতায় উদ্বিগ্ন সৈকত পাড়ের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তুহিন জানান, গত ৪ বছর ধরে লাবণী পয়েন্টের উত্তরে সাগরের ভাঙনে ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যায়। লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে। এটা রক্ষার জন্য জিউ ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু বুধবার জোয়ারে লাবণী পয়েন্টে ভাঙন তীব্র হয়ে উঠে। যার কারণে সৈকতের বালিয়াড়ির বিশাল অংশ বিলীন হয়ে ভাঙন কাছাকাছি চলে এসেছে। যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সও প্রায় বিলীনের পথে।
একই পয়েন্টের ব্যবসায়ী সরওয়ার আলম জানান, বালিয়াড়িতে কিটকট (বিচ ছাতা) সারিবদ্ধভাবে যেখানে রাখা হতে লাবণী পয়েন্টের ওই অংশ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন চলে গেছে দক্ষিণের সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টেও। এসব পয়েন্ট পর্যটকের ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় পয়েন্ট। ফলে পর্যটন শিল্পেও এর প্রভাব পড়বে।
আগত পর্যটকদের কয়েকজন জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নামার প্রধান পথ হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। এ পয়েন্টে নামলেই সামনে ভাঙন। যা পর্যটকের জন্য আতংকেরও বটে।
গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সি সেইফ সংস্থার লাইফগার্ড কর্মী মোহাম্মদ জহির বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতের একমাত্র নিরাপদ গোসলের জায়গা হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। কিন্তু ভাঙনের কারণে পর্যটকরা আসবে কিনা সংশয় রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, সৈকতের তীব্র ভাঙনের পুলিশের কয়েকটি স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এটা রোধে পরিবেশবান্ধব কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধে জিউ ব্যাগের কাজ চলমান রয়েছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে সৈকতের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, লাবণী পয়েন্টের দৃশ্য ঘুরে দেখেন। নিজের মোবাইলে ধারণ করেন ভাঙনের চিত্র।
পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশের ভাঙন রোধে কয়েক বছর ধরে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এটি খুবই অস্থায়ী একটি ব্যবস্থা। এই জিও ব্যাগ বসিয়েও ভাঙন রোধ সম্ভব হচ্ছে না। জিও ব্যাগ সাগরের এই ভাঙনে কাজ করে না। তা অস্থায়ী ব্যবস্থা। অনেক উঁচু বাঁধ দরকার। ইতোমধ্যে একনেকে ৩,১৪০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প জমা দিয়েছি। নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ হবে। এটি নির্মিত হলে তখন হয়তো সাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে কক্সবাজার।
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ, স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা আবুল কাশেম আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।