নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজার শহরের প্রাণ কস্তুরাঘাটস্থ বাঁকখালী নদী দখল ও প্যারাবন কেটে স্থাপনা নির্মাণকারী ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার রাতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও একটি মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
বাঁকখালী নদী দখল ও প্যারাবন কর্তন করায় এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন ইউছুফ, আশিক, কপিল উদ্দিন, মিজানুর রহমান, জসিম উদ্দিন, কামাল মাঝি, রুকন উদ্দিন, নুরুল আবছার, নুরুল হুদা, নুরুল আমিন, মোস্তফা কামাল, জাহেদুল ইসলাম শিবলু, আমীর আলী, ওমর ফারুক, শরিফুল আলম চৌধুরী, মাহমুদুল করিম, মো. সোহেল, জসিম উদ্দিন, জিয়া মো. কলিমুল্লাহ, খোরশেদ আলম চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ ও দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট প্যারাবন কর্তন এবং জলাশয় ভরাট করে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পর পর দুটি মামলা দায়েরের পরও থেমে নেই বাঁকখালী নদী দখল করে ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ, প্যারাবন ধ্বংস, জোয়ার-ভাটায় বাঁধ দেয়া ও জলাশয় ভরাট কার্যক্রম।
বুধবার বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় পরিদর্শনে দেখা যায়, নদী দখল, ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের ভয়াবহ চিত্র। গত চার মাস ধরে নদী দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করার কারণে দখলদাররা বেপরোয়া গতিতে অপরাধ অব্যাহত রেখেছে বলে মনে করেন পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘নদী দখল এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় জোয়ার-ভাটায় বাঁধ দিয়ে জলাশয় ভরাট ও প্যারাবন ধ্বংসের কর্মকা- গত চার মাস ধরে অব্যাহত থাকলেও জেলা ও ভূমি প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি। এতে দখলদাররা অপরাধ কর্মকা-ে উৎসাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি নদী দখল ও দূষণে পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘গত চার মাস ধরে বাঁকখালীতে নদী ও জলাশয় ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ এবং প্যারাবন নিধন অব্যাহত রয়েছে। দুটি মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দরকার। জেলা প্রশাসনের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া গেলেই উচ্ছেদ করা হবে।’
নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দা কক্সবাজার সোসাইটি এর সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন জানান, যেভাবে দখল জোরদার হচ্ছে মনে হচ্ছে অচিরেই নদীর চিহ্ন যেন মুছে যাবে। তিনি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বাঁকখালী নদী ও নদীর প্যারাবন রক্ষায় বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।