নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার >>
কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরসহ টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়ায় ১৩ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার ভারী বৃষ্টিপাত, পাহাড় ধস, পানিতে ভেসে গিয়ে, ডুবে ও দেয়াল চাপায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গত দুদিনে পৃথক ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে টেকনাফে ৫ জন, মহেশখালীতে ১ জন, বালুখালীতে ১ জন ও উখিয়ায় ৩ নিহত হয়েছেন। এছাড়াও নবগঠিত কক্সবাজারের নতুন উপজেলা ঈদগাঁওয়ে ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একই পরিবারের দুই সহোদরসহ ৩ কিশোর নিখোঁজ হয়। পরে দমকল বাহিনী ও স্থানীয়দের সহায়তায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, বুধবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানখালী ভিলেজার পাড়ায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ শিশু নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দুস শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবায়ের (১২), আব্দুল লতিফ (১০), মেয়ে কহিনুর আক্তার (১৪) ও জয়নাব আক্তার (৮)। একই সময় মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা এলাকায় নিহত হয়েছে মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে আলী হোসেন (৮০)। একই দিন বালুখালীতে এক রোহিঙ্গা শিশু পানিতে তলিয়ে মারা যায়। এসব পাহাড় ধসের ঘটনায় অন্তত ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে আহতদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া উখিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিন ব্যক্তি গত মঙ্গলবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এর মধ্যে আবদুর রহমান পালংখালী ইউনিয়নে পানিতে ভেসে নিখোঁজ ছিলেন। আলী আকবর (৩২) রাজাপালং ইউনিয়নে মাছ ধরতে যেয়ে পানিতে ডুবে নিখোঁজ জন। এছাড়া হলদিয়া ইউনিয়নে খাল সাঁতরে পার হওয়ার সময় মো. রাসেল (২৪) নামে একজন নিখোঁজ হন।এদের তিনজনের লাশ গতকাল উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার দরগাহপাড়ার নাসি খালে ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ২ জন, পরে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল।
জানা গেছে, বুধবার দুুপুরের দিকে একই গ্রামের মোহাম্মদ শাহাজাহানের দুই ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২৬) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫) এবং আবছার কামালের ছেলে মোহাম্মদ মোরশেদ (১৪) নামের তিনজন নাসি খালে মাছ ধরতে গিয়ে ঢলের পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। ঘটনার পর থেকে দমকল বাহিনী ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করতে কাজ শুরু করে। প্রায় ৫ ঘণ্টায়ও তাদের পাওয়া যায় নি। বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে চট্টগ্রামের ডুবুরির দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পৌনে ৫টা থেকে তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
রামু ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা সৌমেন বড়ুয়া বলেন, প্রবল বর্ষণ ও ঢলের কারণে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। পরে চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল আসে এবং তাদের লাশ উদ্ধার করে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন জানান, এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় থেমে থেমে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে খাল ও ছড়ায় ব্যাপক পানির ঢলের সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে কিছু ক্যাম্প প্লাবিত হয়েছে। তবে কয়টি ক্যাম্প প্লাবিত হয়েছে তা জানতে সময় লাগবে। বিচ্ছিন্ন কিছু পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে। এতে হতাহতও হয়েছে।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লঘুচাপের কারণে সাগরে জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
বুধবার ভোর থেকে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো বাতাস। এর ফলে কক্সবাজারের সদর উপজেলা, উখিয়া, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও কাঁচা ঘরবাড়ি ও রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা হয়েছে। হাজার হাজার লোক পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পানির ঢলে শত শত একর লবণের মাঠ, মাছের পজেক্ট, পুকুর ইত্যাদি তলিয়ে গেছে। সরকারি সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
কক্সবাজার আবহাওয়া দফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে যে সমস্ত নৌযান চলাচল করে সেসব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
এর আগের দিন মঙ্গলবার সকালে উখিয়ায় দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। বৃষ্টির পানিতে ডুবে আরেক শিবিরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। তাছাড়া পাহাড় ধসে টেকনাফে রকিম আলী নামে একজনের মৃত্যু হয় এবং মহেশখালী তে মাটির দেয়ালচাপায় মৃত্যু হয় মোরশেদা বেগম নামে এক কিশোরীর।
কক্সবাজারে ১৩ প্রাণহানি
টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধস, পানিতে তলিয়ে ও ডুবে মৃত্যু