দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের বিনোদন স্পটগুলো এখন পর্যটকে ভরপুর। এবার সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনিবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে খ্রিস্টানদের বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে এককথায় টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজারে। বহুসংখ্যক পর্যটকের আগমনের ফলে খালি নেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলো। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে রুম খালি না পেয়ে পর্যটকরা উঠেছেন শহরের ভেতর, বাস টার্মিনাল, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও উখিয়ার বিভিন্ন হোটেল-মোটেলসহ নানা স্থানে। আর আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। এদিকে, হোটেল-মোটেলে রুম খালি না পেয়ে বহু পর্যটক সৈকত ও সড়কে ঘুরতে দেখা গেছে। রেস্তোরাঁ, যানবাহনসহ সব জায়গায় বাড়তি অর্থ আদায় ছাড়াও নানা হয়রানির অভিযোগ করছেন পর্যটকরা।
তারা ভ্রমণ করছেন কক্সবাজার সৈকত পাড়, সমুদ্রের নোনা পানিতে ¯œান, পাহাড়-সমুদ্রঘেরা নয়নাভিরাম মেরিনড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি ঝর্ণা, উখিয়ার রুপসী গোয়ালিয়া, ইনানী, ওয়াটার পার্ক, পাথুরে বিচ পাটুয়ার টেক, মনখালী খাল, টেকনাফ বিচ, সেন্টমার্টিন, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, বৌদ্ধবিহার, রামুর বৌদ্ধবিহার, একশ হাত লম্বা বৌদ্ধ মূর্তি, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ নানা পর্যটন স্পট।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকা থেকে আগত শতাধিক পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও রুম পাননি তারা। এখন ভরসা শুধুই ফুটপাত। এরকম বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক সড়কের পাশে অবস্থান করছেন।
রাজশাহী থেকে আগত পর্যটক মনিরুল ইসলাম জিকু বলেন, সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর কলাতলী নামক একটি রেস্তোরাঁতে সকালের নাস্তা করতে যায়। গিয়ে দেখি সেখানে পা রাখার জায়গা নেই। পরে পাশে রাঁধুনী নামক একটি রেস্তোরাঁয় ১ ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করে নাস্তা করি। সেই সকাল থেকে রুম খুঁজতেছি এখনো পাইনি। যে হোটেলেই যাই সবার একটি কথা, রুম খালি নেই।
ঢাকা থেকে ১০ বন্ধু মিলে কক্সবাজার টু্যুরে এসেছেন সাকিব। তিনি বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে এলাম। এসে দেখি রুম খালি নেই। সকাল থেকে রুম খুঁজছি, এখনো পাইনি। তবে একটি কটেজে রুম পেয়েছিলাম তবে এতো উন্নতমানের না, আট হাজার টাকা দাবি করে। এছাড়া রুমটাও ছোট, সর্বোচ্চ ৫ জন থাকতে পারবে। তাই নিইনি। এখন সিদ্ধান্ত নিলাম সাগরে গিয়ে ঘণ্টাখানেক গোসল করব এবং হিমছড়িতে একটু ঘুরে রাতের বাস ধরে ঢাকা ফিরে যাব।
কলাতলী এলাকার তারকা মানের হোটেল সী উত্তরার রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা হাসিবুল বলেন, আমাদের হোটেলে ৬২টি রুম আছে, কিন্তু একটিও খালি নেই। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত সব বুকিং আছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য এলেও তাদের রুম দিতে পারছি না। আবার অনেকে কল দিয়েও রুম চাচ্ছেন।
হোটেল মালিকরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিন সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজার পৌঁছেছেন। টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভালো সাড়া পেয়েছেন তারা। ইতোপূর্বেই শতকরা ৯০ ভাগ হোটেল কক্ষ বুকিং হয়ে যায়।
তারকা মানের রেস্তোরাঁ শালিকের মালিক নাছির উদ্দীন বলেন, সকাল থেকে পর্যটকের চাপ বেশি। খাবার দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার রেস্তোরাঁয় আগে কাজ করতো ২০০ জন। বৃহস্পতিবার থেকে ৪০০ জনের ওপরে কাজ করছে। তারপরও সামাল দিতে পারছি না।
বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। এতে হতাশায় ভুগছিল পর্যটক ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের ছুটিতে আমাদের ৪৫০ হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য অনলাইন ও কল দিচ্ছে তারপরও আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না। আশা করি এই তিন দিনে সাড়ে ৩ লাখ পর্যটক সমাগম হবে।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বিচ কর্মীরা। বিনোদনপ্রেমীদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলার নানান পর্যটন স্পটগুলো।
পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত লাইফগার্ড কর্মী ইউছুফ বলেন, বৃহম্পতিবার থেকে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি। যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি গাজী মিজান বলেন, কক্সবাজার জেলায় যত পর্যটক স্পট রয়েছে সেখানে তিন দিনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের যাতে কোনো প্রকার হয়রানি না হয় সেজন্য হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, টানা তিনদিনের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিমও কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়ই সজাগ আছি।
কক্সবাজার পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় মাঠে আছি। খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু দাম নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।