নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। বিশেষ করে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি ও পর্যটনস্পটগুলো পর্যটকের পদভারে মুখোরিত।
জানা গেছে, ঈদের দিন মঙ্গলবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক জড়ো হয়। ঈদের পরবর্তী দিন থেকে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়ে। ঈদের প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে পর্যটক উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। দেশি পর্যটকের সাথে বিদেশি পর্যটকও যুক্ত হয়েছেন অনেক পর্যটন স্পটে। ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে শনিবার পর্যন্ত পর্যটন নগরীতে ৯ থেকে ১০ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময়ে প্রায় অর্ধহাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের আশাও করছেন তারা।
সৈকতে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের খুঁজে পরিবারের কাছে ফেরাতে এবং তৃষ্ণার্ত পর্যটককে পানি পানের ব্যবস্থা করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। গোসলকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।
টইটম্বুর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। মাঠে টহল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো।
জ্যেষ্ঠমাসের সূর্যের তাপ ভোগাচ্ছে পর্যটকদের। এরপরও সাগরের বুক চরে আসা হাওয়া খেতে লোকারণ্য সৈকতের বালিয়াড়ি। ভিড় রয়েছে হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি রাস্তায়। সবখানেই লোকজনের ভিড়। পর্যটকবাহী ও সাধারণ পরিবহন এবং ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশায় বাইবাস সড়ক, কলাতলী, ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়ক সবখানেই জানজট। অনেক জায়গায় যানবাহনের সঙ্গে লোক-জটও হয়েছে। বড় বাসগুলো টার্মিনাল এলাকায় থাকলেও মাঝারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি পর্যটন এলাকা ও শহরে ঢোকায় এ যানজট বলে অভিমত স্থানীয়দের।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, ঈদ, সপ্তাহিক মিলিয়ে টানা ছুটিকে টার্গেট করে পূর্ব পরিকল্পনায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। কেউ এসেছেন ঈদ রাতে, আবার কেউ এসেছেন বুধবার সকাল-বিকেল ও রাতে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সপ্তাহ-পক্ষকাল আগে থেকেই তারকা মানের হোটেলগুলো আগাম বুকিং হয়ে আছে। গেস্ট হাউজগুলোতে দেখেশুনে উঠছেন পর্যটকরা। পর্যটনকেন্দ্রিক সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট রয়েছে কক্সবাজারে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। ঢাকার কাওরান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মাহমুদুন নবী সাগরে নেমেছেন স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। কোমরসমান পানিতে ভাসছেন টিউবে। আধা ঘণ্টা পর বালুচরে উঠে বসেন চেয়ার-ছাতার কিটকটে। ইব্রাহিম খলিল মামুন নামের আরেক পর্যটক বলেন, লোনাজলে শরীর ভেজাতে কক্সবাজারে ছুটে আসা।
চার কিলোমিটার সৈকতে বসানো হয়েছে এক হাজারের বেশি চেয়ার-ছাতার কিটকট। প্রতিটি কিটকটে বসে আসেন দুই থেকে চারজন। সবার দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে। পর্যটকদের কেউ ঘোড়ার পিঠে উঠে ছুটছেন সৈকতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। বিচ বাইকে চড়েও কেউ কেউ এদিক-ওদিক ছুটছেন।
দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেইলিং করছে ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। এর মালিক মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন পর্যটক প্যারাসেইলিং করেছেন। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ২ হাজার টাকার টিকিট দিয়ে আকাশের উড়তে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। আর ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিটে ওড়ার পাশাপাশি সমুদ্রের লোনাজলে দুইবার পা ভেজানোর সুযোগ পান পর্যটকেরা।
চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকা থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দু’বছর করোনা ভীতির কারণে বেড়ানো হয়নি। চাকরির কারণে অফিস-বাসা এই জীবনের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তার ওপর গত দু’বছর করোনা সব স্তব্ধ করে রেখেছিল। এবার টানা ছুটি পেয়ে সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার এসে কলাতলী দ্য গ্রান্ড সি বিচ হোটেলে উঠেছি। সৈকতে লোকারণ্য বলে দিচ্ছে এ গরমেও পর্যটকে লোকারণ্য হয়েছে কক্সবাজার।
হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, পর্যটন মৌসুমে কমবেশি পর্যটক নিত্যদিন কক্সবাজারে অবস্থান করেন। একমাস সিয়াম সাধনার পর টানা ছুটি মিলিয়ে একসঙ্গে অনেক লোক বেড়াতে এসেছেন। করোনা কালের ক্ষতি কাটাতে এভাবে পুরো মৌসুম ভর্তি থাকুক এটাই আমাদের কাম্য।
কলাতলীর সি নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, গরমের কারণে যে পরিমাণ লোকসমাগম হবে না বলে মনে করেছিলাম, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি পর্যটক উপস্থিতি লক্ষণীয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঈদের আনন্দের সাথে সাগরের ঢেউয়ের নাচনের আনন্দ উপভোগ করতে সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টেসব সবখানে পর্যটক সমাগম হয়েছে। বিনোদনের পাশাপাশি পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। সৈকতের ১১টি পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা আছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাঠে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটককে নিরাপত্তায় দায়িত্বপালন করছে পুলিশ। অনাকাক্সিক্ষত যেকোন ঘটনা রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও নারী পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন। টহলে রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাবও।