আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রিসার্চ সেন্টার ফর ইসলাম এন্ড ইন্টাররিলিজিয়াস ডায়ালগ’ (বিআরসিআইআইডি) আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল লেকচার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ইসলামের যে সার্বজনীনতা মুহাম্মদ (স:) এর পর থেকে শুরু হয়েছিল তা একাদশ দ্বাদশ শতাব্দীতে এসে হোঁচট খেয়েছে কিনা ভাবতে হবে।
বর্তমানে সময়ের সবকিছু দ্রুততার সাথে পরিবর্তন হচ্ছে। তাই অতীতের সীমিত শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে নতুন আঙ্গিকে গবেষণা করতে হবে, শিখতে হবে। পশ্চিমারা দাবি করছে সবদিক দিয়ে উন্নত ও সভ্য এমনকি মানুষ হিসেবেও তারা সেরা। তা নাহলে বিশ্ব কেন পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকছে।
কিন্তু আসলে কি তাই? পশ্চিমা মডেল ত্যাগ করে ইসলামিক চিন্তাকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে এ উপনিবেশায়ন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের গৌরবোজ্জল ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হবে। সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ থেকে আমরা কিভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সে ইতিহাস ও চেতনাকে পুজি করে পশ্চিমা ঔপনিবেশবাদ থেকে মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। আমরা চাইলে জ্ঞানের ধারনা পাল্টে দিতে পারি।
বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টারের অধীনে এ ধরণের আরো গবেষণা ও লেকচারে আয়োজন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, হাজার হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা আজকে পৃথিবীর সব বাঙালির জন্য ‘জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ’।
সেই কারণে বঙ্গবন্ধু মুজিব শুধু বাংলাদেশের বাঙালিদের নেতা নন, তিনি সমগ্র পৃথিবীর সব বাঙালির নেতা।
অনুষ্ঠানে স্পিকারের বক্তব্যে আমেরিকার সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আধুনিক শিক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞানে নৈতিকতার বিষয়টিকে বিন্দুমাত্র বিবেচনায় আনা হয়নি। ফলে উন্নতির উচ্চশিখরে অবস্থান করা সত্বেও তাদের নৈতিক পদস্খলন সমাজ-সভ্যতাকে বারবার কুঠারাঘাত করছে এবং পারমাণবিক বোমার মতো মারণাস্ত্র তৈরী করে বিশ্ব মানবতার ধংসের উৎসব করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাদের সৃষ্ট গণতন্ত্র, জীবনাচরণকে বিশ্বের জন্য মডেল ও গ্রহণযোগ্য বলে দাবী করা হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যেসব উদ্ধৃতি ও নামগুলো তাতে কোথাও মুসলিম সভ্যতা, মনীষীর নাম বা রেফারেন্স পাওয়া যায় না। অথচ বিশ্ব সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান কোনভাবে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, উপনিবেশবাদি মানসিকতা থেকে ব্রিটিশরা এমন একদল মানুষ তৈরী করতে চেয়েছিল যারা রক্ত ও বর্ণে ভারতীয় কিংবা বাঙ্গালী, কিন্তু চিন্তাচেতনা ও রুচিবোধে ইংরেজ হবেন। সুতরাং উপনিবেশিক এ শিকল থেকে মুক্তির জন্য ঔপনিবেশিক চিন্তা-চেতনা থেকে মুসলিম মন ও মননকে মুক্ত করতে হবে।
আধুনিক জ্ঞানের আলোকে ইসলামকে যুগোপযোগী করে উপস্থাপন করতে হবে। ইসলামের সার্বজনীনতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবতাবোধের বিষয়সমূহ উপস্থাপন করতে হবে।
প্রো- ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড মসরুল মাওলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির। উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ এফ এম আক্তারুজ্জামান কায়ছার, আইকইসি’র ডাইরেক্টর প্রফেসর ড. দেলাওয়ার হোসাইন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআরসিআইআইডি’র ডাইরেক্টর ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সরওয়ার আলম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন।বিজ্ঞপ্তি