সুপ্রভাত ডেস্ক :
অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। চলছিল চিকিৎসা। তার পরেও জীবনের কাছ হার স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। সুশান্তের তবু চিকিৎসা শুরু হয়েছিল, কিন্তু এ দেশে হয়তো এমন অসংখ্য মানুষ আছেন, যারা মানসিক অবসাদে ভুগলেও তা ধরাই পড়ে না। নিজেদের মানসিক যন্ত্রণা, হতাশার কথা অনেকে মুখ ফুটে বলতেই পারেন না। চিকিৎসা করা বা কাউন্সেলিং শুরু করার সুযোগই আসে না তাদের সামনে।
সুশান্ত সিং রাজপুতের করুণ পরিণতি হয়তো আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিল, মানসিক সমস্যা নিয়ে মুখ বুজে থাকলে এ ভাবেই তার খেসারত দিতে হতে পারে। কিন্তু আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যে মানসিক অবসাদে ভুগছেন না, তা কীভাবে বুঝবেন?
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বা লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই থাকেন যাদের মধ্যে এরকম কোনও লক্ষণই দেখা যায় না।
মনোবিদরা বলছেন, জীবনে যেকোনও ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া, ব্যক্তিগত বা আর্থিক ক্ষেত্রে কোনও বিপর্যয়, সমাজ বা বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, সঙ্গীর মৃত্যু বা বিচ্ছেদ- এমন নানা হতাশা থেকেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার প্রবণতা জাগতে পারে যে কোনও কারও মধ্যেই। করোনা অতিমারির জেরে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে।
কিন্তু অবসাদ ঠিক কী? মনোবিদদের মতে, একটা দিন খারাপ গেলে হতাশ হয়ে পড়াটাই অবসাদ নয়। এটা তার থেকে অনেক জটিল। ক্রমাগত মনের মধ্যে জমাট বাঁধতে থাকা হতাশা, দুঃখ, দৈনন্দিন জীবনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, যা বেঁচে থাকাটাই কঠিন করে তোলে। অবসাদগ্রস্তদের মধ্যে সবসময় আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। আমাদের চারপাশে থাকা মানুষের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো এই ধরনের প্রবণতা কারও কারও মধ্যে চোখে পড়বে।
মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, ‘সব মানুষের মধ্যেই অবসাদ থাকে। কারও ক্ষেত্রে কম, কারও বেশি। কেউ কেউ এটাকে সামলে উঠতে পারেন, কিন্তু অনেকেই তা পারেন না।’
মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, অবসাদ দু’ রকমের হয়- প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রথমটির ক্ষেত্রে কোনও কারণ ছাড়াই কাউকে অবসাদ গ্রাস করতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে অবসাদের নির্দিষ্ট কারণ থাকে।
জীবনের প্রতি নেতিবাচক ভাবনাচিন্তা চলে আসাই অবসাদের প্রথম লক্ষণ। নিজের বা পরিবারের কারও জীবনে খারাপ কিছু ঘটলেই অবসাদগ্রস্তরা নিজেদের দায়ী করতে শুরু করেন। সবকিছুতেই আগ্রহ হারিয়ে যায়। এমন কি শখ, প্রিয় খেলাধুলোতেও আগ্রহ থাকে না।
মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অবসাদের জেরে অনেকেরই ঘুম কমে যায়, সারাদিন তারা খিটখিটে হয়ে থাকেন। আবার এর উল্টোটাও কিছু ক্ষেত্রে হয়। অবসাদ খেকে ক্লান্তি গ্রাস করে, যা থেকে অতিরিক্ত ঘুমনোর প্রবণতা তৈরি হয়। অবসাদগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষিদেও কমে যায়, যার ফলে এক ধাক্কায় ওজন হ্রাস পায়।
অবসাদগ্রস্তরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। মুহূর্তের মধ্যে তাদের মেজাজ বদলে যেতে পারে।
মনোবিদদের মতে, এই সময় অনেকেই নিজেকে একা সরিয়ে নেন। সবসময় তাদের কান্না কান্না পায়। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন অবসাদগ্রস্তরা। মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেন। তিন মাসের বেশি এই লক্ষণগুলি কারও মধ্যে স্থায়ী হলেই তার অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। না হলে অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
কারও মধ্যে এই প্রবণতাগুলি দেখলে তাদের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করুন। কোনওমতেই এই ধরনের মানুষকে একা ছাড়বেন না। মনে রাখবেন, এই সময়টাই অবসাদে ভোগা মানুষটির আপনাকে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনুন, তাদের উপরে বিরক্ত হয়ে চিৎকার করবেন না বা কটূ কথা শোনাবেন না। অবশ্যই তাদেরকে একজন মনোবিদের কাছে নিয়ে যান।
কোনও সময় জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাববেন না। মনে রাখবেন, আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। আত্মহত্যার কথা মাথায় এলে পরিবার, বন্ধুদের তা জানান। শুধু তাই নয়, একজন মনোবিদের পরামর্শ নিন।
খবর : নিউজ১৮’র।
ফিচার দেউড়ি