এমএলএম কোম্পানির আড়ালে প্রতারণা

এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক »

প্রশাসন বারবার অভিযান পরিচালনা করলেও মুরাদপুর এলাকার এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনবিহীন ওষুধ, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বাণিজ্য থামছে না। বিএসটিআই, ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনবিহীন ওষুধ, কসমেটিক্সসহ নানা পণ্য বিক্রি করার দায়ে গতকাল সোমবার অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, বডি লোশন ও মধু বিক্রি করার অপরাধে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই এবং ওষুধ প্রশাসন কর্মকর্তা।

জানা যায়, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড নামক ওই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টি লেভেল মাকেটিং (এমএলএম) কোম্পানির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে নানারকম ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে আসছে। তাদের এসব প্রতারণার জন্য সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ইতোপূর্বেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানারকম প্রতারণার অভিযোগে বেশ কয়েকবার অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন, ওষুধ প্রশাসন ও বিএসটিআই।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট প্রতীক দত্ত সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি যে এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড নামক প্রতিষ্ঠানটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) আড়ালে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। আমরা তা জানার পর অভিযান পরিচালনা করি। দেখা যায় তারা ভুয়া বিএসটিআই সনদ, ওষুধ প্রশাসন, ফার্মেসি কাউন্সিলের অনুমতি না নিয়ে শক্তিবর্ধক, যৌন উত্তেজক, গ্যাস্ট্রিক ও ডায়াবেটিস এর ট্যাবলেট এবং বিভিন্ন মিথ্যা এবং চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি করছে। ট্যাবলেটগুলো আনা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। এসব অনিয়ম দেখে আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করি। এসকল নকল, অবৈধ ও ভেজাল পণ্য জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বায়েজিদ এলাকার বিসিক শিল্প নগরীতে কল্পনা কমোডিটিসের কারখানায় ১০ ধরনের ভেজাল ঘি উদ্ধার করেছি। এ প্রতিষ্ঠানও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়ে ভুয়া বিএসটিআই সনদ ব্যবহার করেছে। এতে সাধারণত রাতেই ভেজাল ঘি তৈরি করা হতো যা স্থানীয়রা জানতো না। এসব অপরাধ আমলে নিয়ে ফ্যাক্টরির মালিক জগদীশ ঘোষকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।’

এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ডের প্রতারণার কারণে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে।

গত ২০২০ সালের ২২ জুন পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. ওমর ফারুক। ওই অভিযানে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার জরিমানা করা হয়েছিল।
অভিযানটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড নামের প্রতিষ্ঠানটি আইকন টাওয়ারের ৭ম তলায় মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও কসমেটিক্স বিক্রয় করে আসছে। ওই সময় বিপুল পরিমাণ ওষুধ ও কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছিল। যা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে মানবদেহের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তারা ওষুধগুলোর মধ্যে পাওয়ার সোর্স কিং, ভিটা পাওয়ার, ওমেগা ৩-৬-৯, হার্ট কেয়ার ও গ্যানো মরিং ফুড ক্যাপসুল বিক্রি করছিলেন।’

চট্টগ্রাম ওষুধ প্রশাসন জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন বলেন, ‘আমি যখন অভিযানে ছিলাম ওই সময়েও প্রতিষ্ঠানটির নানা অসঙ্গতি পাওয়া যায়। তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিক্রি করছিলেন। তাদেরকে সতর্কও করা হয়েছিলো।’

এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ডের মো. আনায়ার হোসাইন নামের এক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘সাইক্লিং পদ্ধতিতে এ ব্যবসা তারা পরিচালনা করেন। এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ডে একজন কাস্টমারকে সদস্য হতে হলে ৭ হাজার টাকার ওষুধসামগ্রী কিনতে হয়। ফলে নতুন কেউ যদি তার মাধ্যমে যোগ দেয় তাহলে তিনি কমিশন ৫০০ টাকা পান।’