নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
শঙ্খ নদীর তীরে দুইশো বছর ধরে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছি পাড়ার বাসিন্দারা বসবাস করে আসছেন। পূর্ব পুরুষের বসতভিটা ও ঘর-বাড়িতেই তাঁদের জন্ম-মৃত্যু। তাঁরা নানা স্বপ্নে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাপ-দাদার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছেন। শঙ্খ নদীতে প্রবল স্্েরাতের কারণে গত ৩০ জুলাই এক রাতেই ১১টি পরিবারের ঘর-বাড়ি, সহায় সম্বল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এর আগে গত ১০ বছর ধরে চলমান ভাঙনে শতাধিক পরিবার বাপ-দাদার বসতভিটা হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে গেছেন। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন নতুন বসতভিটা। এখন অনেকেই শঙ্খ নদীর পানিকে নিশানা করে তীরে দাড়িয়ে বাপ-দাদার কবর জিয়ারত করেন। ছোটবেলার স্মৃতির কথা প্রলাপ করে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে দেন বয়স্ক ঘর-বাড়ি ও বসতভিটা হারানো অনেক বাসিন্দা। প্রতিবেশি ও স্বজনদের বসতভিটায় ভূমিহীন হয়ে নানা লাঞ্ছনা, তিরস্কার ও হয়রানিতে বেঁচে আছেন অনেক পরিবার। ওইসব ভূমিহীন পরিবার কারা পাচ্ছেন ভূমিহীনদের নামে করা প্রকল্পের ভূমিহীন ঘর ? স্থানীয়দের প্রশ্নের শেষ নেই।
সরেজমিন গিয়ে শঙ্খ নদীতে ঘর-বাড়ি হারানো এবং ভাঙনের মুখে থাকা বাসিন্দা সোলতান আহমদ, বেদার হোসেন, নেজাম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, নুর উদ্দিনসহ অনেকের অভিযোগে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে শঙ্খ নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু খেকোদের বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীর ভাঙছে ব্যাপক হারে। যখন অবৈধ বালু তোলা হতোনা তখন তেচ্ছি পাড়ায় শঙ্খ নদীর তীর কখনো ভাঙেনি। কেউ ভূমিহীনও হননি। তাঁদের দাবি, শঙ্খ নদীর তীরে ভাঙন রোধে অবৈধ বালু তোলা বন্ধ করতে হবে এবং স্থায়ীভাবে শঙ্খ নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। জরুরী কাজের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লাখ লাখ টাকার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং লুটপাট বন্ধ করতে হবে। গত বছর মাত্র ২০/৩০ হাত জায়গায় ৫৪ লাখ টাকায় বালুভর্তি ১৩ হাজার ৫০০টি জিও ব্যাগ বর্ষা মৌসুমে নদীতে ডাম্পিং করেছে। এবারো ভাঙন শুরু হলে ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ৭ হাজার ৫০২টি জিও ব্যাগ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। শুস্ক মৌসুমে না করে বর্ষা মৌসুমে ওইসব জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ে ব্যাপক লুট-পাটের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ বলেন, ‘শঙ্খ নদীর তীরের প্রাচীন এই তেচ্ছি পাড়াকে বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত স্থায়ী নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ। নচেৎ পাড়াটি রক্ষা করা যাবে না। গত ১০ বছরে শতাধিক পরিবার নদীতে বিলীন হয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। এখনো ভাঙনের মুখে আছে অর্ধশত পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সেই নজর নেই।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘শঙ্খ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ১১টি ঘর-বাড়ির বাসিন্দাদের খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শঙ্খ নদীর তীর রক্ষার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, ‘পুকুরিয়ার তেচ্ছি পাড়া এলাকায় আপতত জিও ব্যাগ দিয়ে নদীর তীর রক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে স্থায়ী নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে। এর চেয়ে বেশি কিছু করার এখন সিদ্ধান্ত হয়নি। জিও ব্যাগে লুটপাটের বিষয়টি সঠিক নয়।’