যে প্রকল্পটি আরো কয়েক বছর আগে শুরু হওয়ার কথা, সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, পরিকল্পনা গ্রহণে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতার কারণে-তা হয়ে ওঠেনি। এখন প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ছে বিলম্বের কারণে তারপরও জট এবং রশি টানাটানির এক পর্যায়ে সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প বাস্তবায়নে এক প্রকার হতাশা আচ্ছন্ন করেছিলো দক্ষিণ জনপদের অধিবাসীদের। অবশেষে সকল অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে বুধবার রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানালেন কর্ণফুলী নদীর ওপর একসঙ্গে রেল-কাম সড়ক সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুর এক অংশে দুই লেনের সড়কটি হবে ১৯মিটার চওড়া। সেতুর অর্ধেক অংশে থাকবে রেলপথ। একই সাথে রেল ও সড়কে গাড়ি চলবে। আগামী বছরের জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু হতে পারে বলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
নতুন এই সেতুটির নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতুর উচ্চতা নিয়ে রেল ও বিআইডব্লিউটিএ’র মধ্যে যে মতভেদ ছিল তারও নিরসন হয়েছে। এখন সেতুর উচ্চতা হবে ৭ দশমিক ৫মিটার। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ২০২২ সালের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে কর্ণফুলী নতুন সেতুটির কাজ শেষ করতে হবে। সেতুটি হলে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার এই ৪ দেশের মধ্যে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এরই সাথে চট্টগ্রাম কক্সবাজার-গুনধুম পর্যন্ত রেলপথ ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথের সাথে যুক্ত হবে। এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য, পর্যটন, শিল্পায়নে দেশিÑবিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
রেল সেতুটি শতবর্ষের পুরনো বিধায় নতুন করে রেল সেতু নির্মাণ অপরিহার্য ছিল। একই সাথে সড়ক সেতুর জন্য দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিবাসীদের দাবিও ছিলো। এই সেতু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের জেলা উপজেলার সাথে যোগাযোগে সময়ও কম লাগবে। মহানগর সংলগ্ন উপজেলার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে এসে দিনের কাজ দিনে সেরে বাড়ি ফিরতে পারবেন। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর উপর অভিবাসন চাপ কমবে। প্রয়াত সংসদ সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদল সড়ক সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সংসদে খুবই সোচ্চার ছিলেন।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় যে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে তার ফলে আগামী কয়েক বছরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ‘বাণিজ্যিক হাব’ হিসেবে গুরুত্ব পাবে। সেভাবেই চট্টগ্রাম মহানগরীকে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষভাবে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন করতে হবে। কিছুদিন আগে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেট্রোরেল স্থাপনের সম্ভাব্যতার কথা বলেছেন। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে।
রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের কাজের ধরণ পাল্টায়নি, রেলের প্রকল্পগুলির গতি অত্যন্ত ধীর। রেলের নানা অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অনিয়ম স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কমেনি, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয় যাত্রীদের। তাছাড়া চট্টগ্রাম-দোহাজারী-চট্টগ্রাম নাজিরহাট লাইনে বাড়তি ট্রেন দেবার দাবি দীর্ঘদিনের তাই এ শাখা লাইনগুলির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বাড়ছে। সামনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন-এসব বিবেচনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর সাথে সংলগ্ন শাখা লাইন ও ফেনী-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্রুতগতির ট্রেন চালু করা প্রয়োজন। কর্ণফুলীর ওপর নির্মিতব্য রেল ও সড়ক সেতু এশিয়ার পূর্বমুখি দেশগুলির সাথে আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রভূত অবদান রাখবে। আমরা চাই যথাসময়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু ও শেষ হবে।
মতামত সম্পাদকীয়