ফলাফলে দুঃখজনক সংবাদ হলো, দেশে গত ৫ বছরের মধ্যে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন। একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি ২০২১ সালে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫ টি। আর চলতি বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২টি-তে।
এর আগে ২০২২ সালে ৫০ টি, ২০২৩ সালে ৪২ টি এবং ২০২৪ সালে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। এ হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৪০ গুণ। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালীন শিখনঘাটতি, ৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষাগ্রহণ, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরীবর্তন এবং সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষ বিমুখতা ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪। ২০২৪ সালেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এছাড়া ২০২৪ এ গণঅভ্যুথ্থানের সময় স্থগিত পরীক্ষাগুলো পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাতিল করা হয় এবং এসব বিষয়ে অটোপাস দেওয়া হয়। এ বছরে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এদিকে, ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১ টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০০৪ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৪৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এছাড়া গত দুই দশকে পাসের হার ৬০ শতাংশের নিচে নেমেছে শুধু ২০০৫ সালে। ওই বছর পাসের হার ছিল ৫৯ দশকি ১৬ শতাংশ। ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ে এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল ৬৪ থেকে ৭৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি বলেছেন, এইচএসসির ফল খারাপ নয়, বরং এটি বাস্তবতার প্রতিফলন। আমরা ফল বানাইনি। বাস্তব চিত্রটাই এবার সামনে এসেছে। আর শিক্ষার্থীরা এখন পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে।
এ জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয়। মার্কস বাড়িয়ে যদি পাশের হার বাড়ানো হতো তাহলে শিক্ষার প্রকৃত চিত্রটি আমরা পেতাম না। এখন আমরা বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে পারব। এ থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ধস নেমেছে তা থামাতে হবে। নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। নির্বাচন, সংস্কার করতে করতে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে সেদিকে নজর দিতে হবে।