সুপ্রভাত ডেস্ক »
২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি ব্যাংকে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি।
ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো নিয়ে ১৫ বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই হিসাব দিয়েছে সংস্থাটি।
সিপিডি বলছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। গত ১৫ বছরে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
শনিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এই হিসাব তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজ।
বিভিন্ন ঋণ খেলাপির ঘটনায় বিশাল পরিমাণ এই অর্থ বেরিয়ে গেলেও এর বিপরীতে ‘যৎসামান্য’ অর্থ আদায় হয়েছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘শক্তিশালী’ করার ওপর জোর দেন ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, তা পুরোটা নয়। ১০ বছর আগে খেলাপির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থাকলেও সবশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়।’
এছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল, মামলার কারণে খেলাপি দেখাতে না পারা ও অবলোপন করা খেলাপি ঋণের তথ্য দেখানো হয় না বলে জানান তিনি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা রাখে সাধারণ জনগণ। সেই টাকা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব আমাদেরও। জনগণের অধিকার রয়েছে তা জানার।
‘একটি শ্রেণি ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করে একের পর এক ঋণ অনিয়ম করছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে জরুরি হয়ে পড়েছে অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-কানুনের অভাব নেই। কিন্তু এখন যারা অনিয়ম করে ঋণ নিচ্ছে, তারাই আবার বাংলাদেশ ব্যাংকে নীতিমালা করার জন্য চাপ দেয়। এজন্য শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন।’
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরকারি অর্থায়ন, ব্যাংকিং খাত, বিদেশি অর্থায়ন ও ঋণ বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং শ্রম অধিকার ইস্যু নিয়ে নানা রকম সমস্যা বিরাজ করছে।’
‘আমাদের মূল্যস্ফীতি আমদানি পণ্যের কারণে বলা হলেও আসলে বিদেশে পণ্যের দাম কমলে দেশে কমছে না। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত সম্পদ কর এবং ডিজিটাল ইকোনমি করের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকিং খাতের মন্দ ঋণ বন্ধ করতে নানা রকম উদ্যোগের কথা শুনা গেলেও কার্যকর কিছু করা হয়নি।’
‘আমাদের অর্থনীতির এই ক্রান্তিকাল পার হওয়ার জন্য যথাযথ সংস্কার দরকার এবং পদক্ষেপ অবশ্যই রাজনৈতিক পর্যায় থেকেই আসতে হবে। এজন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার”, বলেন ফাহমিদা।
কোন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন- সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমার মনে হয় যে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।
‘অন্তত ১২টি বড় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার দরকার। যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থমন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, বেপজা, লেবার কোর্ট, শিল্প পুলিশ, বর্ডার গার্ডস, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (এবিবি), প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’