চেম্বারে আলোচনা সভা
হালদার পরিবেশ অক্ষুণœ রেখে পানি সংগ্রহ করা হবে : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
সন্দ্বীপেও ১৩ হাজার একরজুড়ে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে : পবন চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক :
হালদা থেকেই পানি যাচ্ছে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে। চট্টগ্রাম ওয়াসার মাধ্যমে হালদা নদীর মোহরা পয়েন্ট থেকে দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি নিলে হালদার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে বলে পরিবেশবাদীরা বাধা দিয়ে আসছে। কিন্তু হালদার ক্ষতিসাধন না করেই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম।
তিনি গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে হালদা নদী থেকে পানি নিয়ে মিরসরাই অঞ্চলে সরবরাহ করা হলে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বৃষ্টি ও কাপ্তাই হ্রদ হতে নেমে আসা পানি সরাসরি সাগরে চলে যায়। এই পানি সংগ্রহ করে শিল্পায়নে ব্যবহার করা হলে তা মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে দিনে ১২০ কোটি লিটার পানির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিকল্প উৎস হতে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হবে। তবে হালদার পরিবেশ অক্ষুণœ রেখে পানি সংগ্রহ করা হবে।
হালদা ইস্যুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, হালদা নদী থেকে পরিবেশ অক্ষুণœ রেখে কিভাবে শিল্পের জন্য পানি সংরক্ষণ করা যায় সে অনুসারে কাজ করা হচ্ছে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্থ’ানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইকনোমিক জোনস অথরিটি (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, উন্নয়নের স্বার্থেই সেবা সংস্থা সমূহের মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য। এই সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা, লজিস্টিক ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ কাজে লাগাতে হবে। মিরসরাই শিল্প নগরে প্রায় ৩০ লাখ লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলী টানেল হয়ে মিরসরাই পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হলে তা পর্যটনসহ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সভায় বিভিন্ন বক্তাদের কথায় উঠে এসেছে চট্টগ্রামে শিল্পায়নের স্বার্থে টেকসই সড়ক নির্মাণ, বহদ্দারহাট থেকে ইপিজেড পর্যন্ত পর্যাপ্ত ফুটওভার নির্মাণ, কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলপথে ও নদীপথে যোগাযোগ উন্নয়ন, সীতাকু-ে বেসরকারি বা পিপিপির আওতায় জেটি নির্মাণ, মিরসরাইয়ে এসএমই খাতের জন্য আলাদা জোন তৈরি করা, চট্টগ্রাম মহানগর ও বাইরে প্রয়োজনীয় বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, আউটার রিং রোডের সাথে ইপিজেডের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, উন্নয়নের জোনভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ, জাতীয় পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমন্বয় সেল গঠন করা, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ ও ওয়াসার সম্মিলিতভাবে চৌচালা হয়ে রিং রোড সংযোগ সড়কের সমাধান, পাহাড়ি ছরা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
উন্নয়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইকনোমিক জোনস অথরিটি (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, মিরসরাই শিল্পনগর, সীতাকু-, ফেনী, নোয়াখালী শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি সন্দ্বীপেও ১৩ হাজার একরজুড়ে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে যা পর্যায়ক্রমে লাকসাম-কুমিল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। মিরসরাই জোন থেকে ৩০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ বেজা বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আগামীতে ১০টি বন্দরের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বেজার মাধ্যমে ৩২টি সেবা একযোগে প্রদান করা হয় । হালদা, কর্ণফুলী ইত্যাদি নদী বাঁচানো, প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা এবং একই সাথে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কর্মকা-ও একসাথে পরিচালনা করতে হবে ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরসরাই শিল্পাঞ্চলসহ চট্টগ্রামের বাইরেও শিল্পের প্রসার ঘটছে। কুমিরা নৌবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেরিন ড্রাইভকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে এই চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এবং অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন সাপেক্ষে চট্টগ্রাম এশিয়ার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু এবং বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। তিনি এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম জাপানের বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ (বে অব বেঙ্গল গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেল)’র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিধায় এর উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ আগামী ২০ বছরের একটি ভিশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে।
মাহবুবুল আলম আরো বলেন, চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি বাস্তবায়নে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অনতিবিলম্বে বে-টার্মিনাল নির্মাণ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং, চট্টগ্রাম ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের সুরক্ষা এবং কার্যক্ষেত্রের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া, চিটাগাং চেম্বার পরিচালক এস. এম. আবু তৈয়ব ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল), বিকেএমইএ’র প্রাক্তন পরিচালক শওকত ওসমান, বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম ও জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল প্রমুখ।