সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক
১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ মেলবোর্নে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরে ‘কিং খান’ বনে গিয়েছিলেন ইমরান খান। ৩০ বছর পর সেই এমসিজিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হাতে ধরে গর্বের হাসি হাসতে পারবেন বাবর আজম? নাকি গ্রাহাম গুচ, ইয়ান বোথাম, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, নেইল ফেয়ারব্রাদার, ক্রিস লুইস আর ডেরেক প্রিঙ্গলরা না পারলেও জস বাটলার, অ্যালেক্স হেলস, পিল সল্ট, মইন আলিরা কী ঠিক ৩০ বছর আগের ব্যর্থতার প্রতিশোধ নেবেন!
এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। আজ ১৩ নভেম্বর মিলবে এর জবাব। বেশিরভাগ ক্রিকেট অনুরাগিই ১৯৯২ সালের সাথে এবারের চালচিত্রর মিল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। খবর জাগোনিউজের
শেষ পর্যন্ত সে হিসেব ঠিক থাকবে কি না? তার উত্তর দেবে সময়। তবে সংস্কারবাদীরা এরই মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ কষছেন এবং যেহেতু ৯২ সালে ইমরান খানের পাকিস্তান হেসেছিল শেষ হাসি, তাই তাদের চোখ পাকিস্তানের দিকেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৯২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বসেরা হয়েছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। সেবার অকল্যান্ডে সেমির যুদ্ধে মার্টিন ক্রোর নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করেছিল পাকিস্তানীরা। কাকতালীয়ভবে এবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেই নিউজিজল্যান্ডকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠে বাবর আজমের দল। কাজেই সংষ্কারবাদীরা এবারের পাকিস্তানের সঙ্গে ৯২’র সেই পাকিস্তানের অগ্রযাত্রার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। যদিও ফরম্যাট ভিন্ন। সেটা ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আর এটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তারপরও ইমরান খানের সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের সঙ্গে এবারের ফাইনালে উঠে আসা পাকিস্তানের অগ্রযাত্রার প্রচুর মিল। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেটের হার দিয়ে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের বিশ্বকাপ যাত্রা। ওপেনার রমিজ রাজার শতরানের পরও শেষ রক্ষা হয়নি। ব্রায়ান লারার অনবদ্য উইলোবাজির মুখে ১০ উইকেটে হার মানে পাকিস্তান। সে হারই শেষ নয়। ওই আসরে ভাগ্যও সু-প্রসন্ন ছিল পাকিস্তানীদের প্রতি। আর তাই গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের সঙ্গে নিশ্চিত পরাজয়ের ম্যাচে ১ পয়েন্ট পাবার কথা ছিল না। মাত্র ৭৪ রানে অলআউট হয়েও বৃষ্টির কারণে পরাজয়ের হাত থেকে বেঁচে যায় ইমরানের দল। পাকিস্তান ইনিংস ভালোয় ভালোয় শেষ হলেও তারপরই বৃষ্টিতে আর খেলা শুরু করা যায়নি। তাই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দু’দলের মাঝে পয়েন্ট বন্টন হয়। তাতে করে নিশ্চিত পরাজয়ের হত থেকে বেঁচে ১ পয়েন্ট পায় পাকিস্তান। তাতেই পেয়ে যায় সেমির টিকিট। বৃষ্টি না হলে বিদায় নিতে হতো ইমরান খানের দলকে।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের যাত্রা শুরু হয়েছে হার দিয়ে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে শেষ বলে ৪ উইকেটের হারে শুরু হয়েছে বাবর আজম বাহিনীর বিশ্বকাপ। একইভাবে বৃষ্টির কারণে ১ পয়েন্ট বোনাস না পেলেও গ্রুপ পর্বে ভারত আর জিম্বাবুয়ের কাছে হার মানা বাবর আজমের দল সেমিতে উঠে আসে ভাগ্যের সহায়তায়। নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার অপ্রত্যাশিত পরাজয়েই ভাগ্য খুলে যায় পাকিস্তানের। তাতে করে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রুপের শেষ ম্যাচটি আকার নেয় অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে। যে জিতবে সেই সেমিফাইনালে- এমন সমীকরণে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌছে যায় বাবরবাহিনী। আর সেমিতে ফিন অ্যালেন, ডেভিড কনওয়ে, গ্লেন ফিলিপস, উইলিয়ামসন, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, অ্যালেক্স ফার্গুসনের সাজানো কিউই বাহিনীর স্বপ্ন ভেঙ্গে ফাইনালে উঠে যায় বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের পাকিস্তান।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ৯২‘র ফাইনালেও ভাগ্য ছিল পাকিস্তানের অনুকুলে। ম্যাচের টপ স্কোরার ইমরান খান ১১০ বলে ৭২ রান করার পথে জীবন পান এবং সেটা যার তার হাতে নয়।
খোদ ইংলিশ ক্যাপ্টেন গ্রাহাম গুচ সে ক্যাচ ধরেও ফেলে দেন হাতে। আর সেটাই কাল হয়।
২৪ রানে দুই ওপেনার আমির সোহেল (৪) ও রমিজ রাজা (৮) আউট হওয়ার পর শুরুর বিপর্যয় এড়াতে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা অধিনায়ক ইমরান খান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক গ্রাহাম গুচের হাতে জীবন পেয়ে (১১০ বলে ৭২) বড় ইনিংস খেলে ফেলেন। সঙ্গে জাভেদ মিয়াঁদাদের (৯৮ বলে ৫৮) ধীর গতির অথচ দায়িত্বপূর্ণ অর্ধশতকও পাকিস্তানের বিপর্যয় কাটাতে রাখে কার্যকর ভূমিকা। এরপরে ইনজামাম উল হক (৩৫ বলে ৪২) এবং ওয়াসিম আকরামের (১৮ বলে ৩৩) ঝড়ো উইলোবাজিতে ২৪৯ রানের লড়াকু পুঁজি পায় পাকিস্তান। ওয়াসিম আকরাম (১০ ওভারে ৩/৪৯), আকিব জাভেদ (১০ ওভারে ২/২৭) আর লেগস্পিনার মোশতাক আহমেদের (১০ ওভারে ৩/৪১) সাঁড়াসি বোলিংয়ে ২২ রানে গুচের বাহিনীকে হারিয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হয় পাকিস্তান। আজ ১৩ নভেম্বর ইংলিশদের হারিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্বকাপ হাতে হাসবেন বাবর আজম?