নভেম্বরে আসছে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি
সদস্য সচিব পদে আলোচনায় বক্কর ও সাইফুল
সালাহ উদ্দিন সায়েম :
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির ২৭৫ সদস্যের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। আগামী নভেম্বরে গঠিত হচ্ছে ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হলেও আবার নেতৃত্বে আসছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। আহ্বায়ক পদে শাহাদাতের নাম অনেকটা নিশ্চিত হলেও সদস্য সচিব পদে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলমের নাম আলোচিত হচ্ছে দলের ভেতরে। দলীয় একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে নগর বিএনপির ২৭৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালের ৯ জুলাই। দুই বছরের জন্য অনুমোদিত এই কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ১ বছর আগে।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মূল্যায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর কমিটির ৫৫ জন নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে স্কাইপে সাক্ষাত করেন লন্ডনে বসবাসরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাদের কাছে তিনি নগর বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা ও নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চান। তারেক রহমান নগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার কথা জানিয়ে নেতাদের কাছ থেকে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বের ব্যাপারে মতামত জানতে চান।
এ বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫২ জন নেতা তারেক রহমানের কাছে আহ্বায়ক হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন। একজন নেতা নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু আবু সুফিয়ান আহ্বায়ক পদে ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব পদে আবুল হাশেম বক্করের নাম প্রস্তাব করেন। সদস্য সচিব পদে একাধিক নেতা আবুল হাশেম বক্করের নাম প্রস্তাব করলেও অনেকে যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুলের নাম প্রস্তাব করেন। তারেক রহমান অনেক নেতার কাছে সদস্য সচিব পদে সাইফুল আলমের ব্যাপারে মতামত জানতে চান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে বার্তা দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন আহ্বায়ক পদে ডা. শাহাদাত হোসেন অনেকটা নিশ্চিত। তারা বলছেন, ডা. শাহাদাতের বিকল্প হিসেবে ছিলেন আবু সুফিয়ান। কিন্তু তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির দায়িত্বে থাকায় শাহাদাতের বিকল্প দেখছেন না নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাতে দলের নেতারা আহ্বায়ক হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। আমি দীর্ঘ এক যুগ ধরে নগর বিএনপির নেতৃত্বে আছি। আমি দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি বিধায় নেতাকর্মীরা এখনো আমার প্রতি আস্থা রাখছেন। এটা আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।
আহ্বায়ক হলে পরবর্তীতে নগর বিএনপির আর নেতৃত্বে থাকবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সম্মেলন করে দিয়ে মহানগর ছেড়ে কেন্দ্রে যেতে চায়। যদিও আমি আগে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এবার একেবারে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যেতে চাই।
নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আমি নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে শাহাদাত ও বক্করের নাম প্রস্তাব করেছি। তাদের নেতৃত্বে সাংগঠনিক গতিশীলতা বজায় থাকবে বলে মত দিয়েছি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদস্য সচিব পদে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের পাশাপাশি যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলমের নাম দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। সাইফুল আলম কেন্দ্রের কাছে সদস্য সচিব পদের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে আবুল হাশেম বক্করের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সাইফুল আলম বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে নেতারা যে যার মতো করে মত দিয়েছেন। আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
এদিকে আহ্বায়ক কমিটির মূল নেতৃত্বে যারা থাকবেন তারা পরবর্তী সম্মেলন কমিটিতে থাকতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার সময় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, নভেম্বরের মধ্যেই চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা আসবে। দলের হাইকমান্ডে নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। আহ্বায়ক কমিটির মূল নেতৃত্বে যারা আসবে তারা পরবর্তী সম্মেলন কমিটিতে থাকতে পারবে কি পারবে না সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে।