সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে একই দিনে ফুটবলের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে। আর প্রথমবারের মতো হারের স্বাদ নিলো আর্জেন্টিনা। ঘরের মাঠে সাতটি হলুদাকার্ডের ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নসরা। আর ব্রাজিল ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছে কলম্বিয়ার কাছে।
আর্জেন্টিনার সাবেক ডিফেন্ডার মার্সেলো বিয়েলসা উরুগুয়ের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম আর্জেন্টিনাকে হারালো উরুগুয়ে। সে সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথমবারের মতো হারলো লিওনেল মেসির বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মনে হচ্ছে, অনুজদের দুর্বলতার জায়গাগুলোই নিজের শিষ্যদের শিখিয়ে দিয়েছেন মার্সেলো। বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনাকে মনে হচ্ছিলো অজেয় একটি দল। তাদেরকে কেউ হারাতে পারে, এমনটা মনেই হচ্ছিলো না। কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবের কাছে অবিশ্বাস্য সেই হারের পর বিশ্বকাপ জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা।এরপর এই প্রথম পরাজয়ের স্বাদ নিলো লিওনেল মেসির দল। সে সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঘরের মাঠে এই প্রথম উরুগুয়ের কাছে হারলো আর্জেন্টিনা।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বুয়েন্স এইরেসে নেমে শুরুতেই দুর্দান্ত খেলে আর্জেন্টিনা। আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভাঙার চেষ্টা করেন আল বিসেলেস্তারা। তবু বারবার ব্যর্থ হন মেসি-আলভারেজরা। দ্বিতীয়ার্ধে নেমেও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে উরুগুয়ে। তবে ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েও কপালের কাছে হেরে যান আর্জেন্টিনার তারকা লিওনেল মেসি। বক্সের বাইরে থেকে করা ফুটবল জাদুকর মেসির ফ্রি-কিক উরুগুয়ের গোলপোস্টে আঘাত করে ফেরত আসে। এরপর ম্যাচে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। একের পর এক ফাইল করে হলুদকার্ড দেখতে থাকেন দুই দলের ফুটবলাররা। পুরো ম্যাচে মোট সাতবার সতর্কতামূলক হলুদকার্ড বের করেন রেফারি। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা কার্ডটি দেখেছেন চারবার। অপরদিকে উরুগুয়ে এই কার্ডটি দেখেছে তিনবার। মূলত দলকে সমতায় ফেরানোর জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছিল আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। ম্যাচের ৮৭তম মিনিটে উল্টো আরও একটি গোল হজম করতে হলো আর্জেন্টিনাকে। নিকোলাস ক্রুজের এসিস্টে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে স্বাগতিকের জাল কাঁপান উরুগুয়ের স্ট্রাইকার দারউইন নুনিয়েস। দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন এই লিভারপুর ফরোয়ার্ড। খেলার শেষ মুহূর্তে এসে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় ম্যাচ থেকেই ছিটকে পড়ে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। কনমেবল বাছাইপর্বে এই ম্যাচটিই আর্জেন্টিনার প্রথম হার। এই পর্বে মোট ৫ ম্যাচ খেলে বাকি চারটিতেই জয় পেয়েছে আলবিসেলেস্তারা। ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। অপরদিকে তিন জয়, ১ হার আর ১ ড্রতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উরুগুয়ে। এদিকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে টানা দ্বিতীয়বার হারের স্বাদ নিলো ব্রাজিল। অ্যাওয়ে ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেও ২-১ গোলে স্বাগতিক কলম্বিয়ার কাছে হারতে হয়েছে ব্রাজিলকে। গতকাল শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) মাঠে নেমে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই গ্রাব্রিয়েল মার্টিনেলির গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় সেলেসাওরা। ভিনিসিয়ূস জুনিয়রের আসিস্টে বক্সের মাঝখান থেকে ডানপায়ের দুর্দান্ত শটে গোলটি করেন এই ব্রাজিল ফরোয়ার্ড। দলকে সমতায় ফেরানোর জন্য একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে কলম্বিয়া। তবে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ছিল অত্যন্ত সচেতন। যে কারণে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয়েছে স্বাগতিকদের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে যায় দুইদল। এবার ব্রাজিলের লক্ষ্য ব্যবধান বাড়ানো। আর কলম্বিয়ার লক্ষ্য সমতায় ফেরা। অবশেষে ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ১-১ গোলে দলকে সমতায় ফেরান কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড লুইস দিয়াজ। ক্রিশ্চিয়ান বরজার ক্রসে দুর্দান্ত হেডে ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি। কে জানতো, এরপরই পরিবর্তন হয়ে যাবে পুরো খেলার দৃশ্যপট!
চার মিনিট পর আবারও ব্রাজিলের জালে বল জমা করলো কলম্বিয়া। এবারও দিয়াজের সেই দুর্দান্ত হেড। জেমস রদ্রিগেজের ক্রস থেকে হেড দিয়ে গোলপোস্টের বামকোণ দিয়ে বলটি ব্রাজিলের জালে প্রবেশ করান দিয়াজ। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। কয়েক দফা আক্রমণ করলে এরপর আর ম্যাচ নিজেদের দিকে ফেরাতে পারেনি ব্রাজিল। অবশেষে দ্বিতীয় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ব্রাজিলকে। দক্ষিণ আমেরিকা বাছাইপর্বে (কনমেবল) ৫ ম্যাচ খেলে ২টিতে জয় আর ২টি হেরেছে ব্রাজিল। একটিতে ড্র করেছে ফার্নান্দো ডিনিজের শিষ্যরা। ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে রয়েছে তারা। অপরদিকে ব্রাজিলকে তৃতীয় স্থান থেকে সরিয়ে সেই জায়গা দখল করেছে কলম্বিয়া। খবর জাগোনিউজ’র