নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নবনির্বাচিত সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন চুয়াত্তরের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো কালো আইন হয়েছে। এ আইন বাতিল করে জনগণের ভোটের অধিকার ফেরাতে প্রয়োজনে আবার জনগণকে রক্ত দিতে হবে।’
তিনি গতকাল রোববার প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
সিপিবি সভাপতি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৮ মার্চ বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালে বিএনপির সমর্থন তো আমরা চাইনি। হরতাল আমরা বামপন্থিরা ডেকেছি। বিএনপির সমর্থন তো আমরা চাইনি। বিএনপির রাজনীতি বিএনপি করুক। বিএনপি হরতালে সমর্থন দিয়েছে কিন্তু বিএনপি কি মুক্তবাজারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? বিএনপি কি রেশনশপ চালু করার পক্ষে থাকবে? শিক্ষা-স্বাস্থ্য সরকারিকরণের পক্ষে থাকবে? বিএনপি মুক্তবাজারপন্থি। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে শ্রেণিগত কোনো পার্থক্য নেই, ওরা মুক্তবাজারে বিশ্বাস করে। আমাদের হরতাল মানুষের জান বাঁচানোর জন্য। আমরা কারও ক্ষমতার খেলার হাতিয়ার হতে চাই না, কারও ক্ষমতায় যাবার বাহন হবো না, কাউকে ক্ষমতায় রাখতেও চাই না। আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। আমাদের এ রাজনীতিকে যারা ভণ্ডুল করতে চাচ্ছে, তাদের হুঁশিয়ার করতে চাই।
হরতালে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি, থাকব। মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের লাভ নেই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ৬৮, ৮৩, ৮৭ সালে জেল খেটেছি। কমিউনিস্টদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। অনেক ভয় দেখানো হয়েছে, তারপরও তো কমিউনিস্টরা লড়াই করছে। হামলা-মামলা, চোখ রাঙানি, মাস্তানি, আক্রমণ এগুলো আমরা পরোয়া করি না।
আগামী সংসদ নির্বাচনে সিপিবি অংশ নিচ্ছে কি না সাংবাদিকেদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বামজোট গতবার নির্বাচনে গিয়েছিল। ১৩৪টি আসনে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রার্থী দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনটা হয়নি। পরের দিনের ভোট আগেরদিন রাতে হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ একসময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিল, সেই গণতন্ত্র তারাই নস্যাৎ করে চলেছে।
সিপিবি সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ শেখ মুজিবের আদর্শের বিপরীতে কাজ করছে। লুটেরা রাজনীতিবিদ, লুটেরা ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলারা আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক চরিত্র চুষে খেয়ে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি থেকে তারা দূরে সরে গেছে। জিয়াউর রহমান মুক্তবাজার করেছিলেন, এরশাদ সেটাকে সংহত করেন আর আওয়ামী লীগ সেটাতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গেছে। এ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
শাহ আলম বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমরা ২২ কোটিপতি পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, আজ ৯৪ হাজার কোটিপতি হয়েছে। শ্রেণিবৈষম্য-ধনবৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। আমরা শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, তাতে আর ফিরতে পারিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে, জোট-মহাজোটের বাইরে একটি বিকল্প গড়তে চাই। এ দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে শক্তিশালী বাম বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি সভাপতি অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ জেলা সিপিবির সভাপতি কানাইলাল দাশ ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী এবং সিপিবি নেতা উত্তম চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, মছিউদ্দৌলা, সিতারা শামীম, সেহাবউদ্দিন সাইফু, ফরিদুল ইসলাম ও অমিতাভ সেন।