ভৌগোলিক কারণেই চটগ্রাম বন্দর ব্যবহারে ভারতে আগ্রহ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে ভারতের সেভেন সিস্টার্স বলে খ্যাত বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যগুলোর সুবিধার্থে ভারতের প্রবল আগ্রহ থাকলেও নানা জটিলতায় প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল। অথচ এটা চালু হলে লাভবান হতো দু দেশই। অতীতে বিভিন্ন সরকার জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে এ বিষয়ে অগ্রসর হতে আগ্রহ দেখায়নি। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিবেশীদের জন্য তাদের বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবানই হয়েছে। বাংলাদেশ এই সুবিধা দিয়ে অনেক আগে থেকেই মুনাফা তুলতে পারতো ঘরে। তবে শেষ পর্যন্ত শুরু হওয়ার পথে এই প্রক্রিয়া। প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।
এই ক্ষেত্রে স্থলবন্দর একটি বড় ভূমিকা রাখবে। ফলে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি কয়েকটি স্থলবন্দরও মনোযোগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে আপাতত ছয়টি রুটে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে স্থলবন্দর হয়ে ভারতে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। সম্ভাবনাময় এই ছয়টি রুট হলো চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা, চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল ডাউকি, চট্টগ্রাম বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি, চট্টগ্রাম বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড় এবং ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর।
এরমধ্যে রেলসুবিধা পাওয়া যাবে আখাউড়া ও বিলোনিয়া স্থলবন্দরে। ইতিমধ্যে ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় বিকল হয়ে যাওয়া রেলপথগুলো সংস্কার করে পুনরায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলসংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে আখাউড়া-আগরতলা ও ফেনী-বিলোনিয়া দুটি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে রেলপথে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য রপ্তানি-আমদানি প্রসার ঘটবে বলে রেলমন্ত্রী সম্প্রতি পত্রিকাকে জানিয়েছেন। ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি বন্ধ করে দেয় ক্রমাগত লোকসানের কথা বলে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলপথে ফেনী হয়ে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব। তাই বিলোনিয়া স্থলবন্দরের সাথে যুক্ত ফেনী- বিলোনিয়া রেল রুটটি সংস্কার ও পুনঃস্থাপনে ভারত সবধরনের সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সুপ্রভাতের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান ও চীন পরিবেষ্টিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন সহজ করার লক্ষ্যে আখাউড়া-আগরতলার বিকল্প হিসেবে এ রেল রুট ব্যবহার করতে ভারতের আগ্রহ আছে। রেলে বিলোনিয়া স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব । বর্তমানে বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি পুনরায় চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বাড়বে।
বন্দরকে আরও গতিশীল ও আধুনিকায়ন করে এর সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। এটা আমাদের অর্থনীতির স্বার্থেই জরুরি। এখন বিশ্বায়নের যুগে একলা চলো নীতি বাস্তবসম্মত নয়। যতই উদার মনোভাব গ্রহণ করা যাবে ততই কল্যাণ হবে। এটা শুধু কূটনীতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকেও বিকশিত করবে। দেরিতে হলেও শুরু হোক। সেটাই কাম্য।
এ মুহূর্তের সংবাদ