নিজস্ব প্রতিবেদক »
দেশীয় চাষের মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে আড়ত ও ভোক্তা পর্যায়ে আবারও চড়া হচ্ছে পেঁয়াজের বাজার। এমনকি আড়তে পচে গেলেও কম দামে বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে আমদানি নিয়েও উভয় সংকটে রয়েছে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার দুপুরে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই ঘরে দেখা যায়, গত দুই দিনের ব্যবধানে দেশীয় চাষের মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। আর গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আড়ত পর্যায়ে দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। যা গতবছর এইদিনে বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে আড়ত পর্যায়ে চার গুণ বেড়েছে এ পণ্যেও দাম। আর আমদানির পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১১৭ টাকা, যা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাজারে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে কৃত্রিম সংকট এর কারণে বার বার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকছে না। এদিকে বর্তমানে দেশীয় চাষের মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহও কমে আসছে। হালিকাটা পেঁয়াজ বের হলেও সরবরাহ এখনও কম। ফলে কয়েকদিন থেকে উর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার।’
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, বর্তমান আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। সরকার যদি আমদানির কথা না ভাবে রমজানের আগে দাম আরও বাড়বে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭৩ লাখ টন। গত বছর উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ, যেখানে ২৫ শতাংশ ‘পোস্ট-হার্ভেস্ট’ লস বিবেচনায় নিয়ে মূল উৎপাদন হিসাব করা হয়েছিল ২৫ দশমিক ৪৯ লাখ টন। আর দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন, যা দিয়ে চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ হয়।
উভয় সংকটে ব্যবসায়ীরা, কমছে আমদানি
এদিকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করলেও উভয় সংকটের মাঝে আছেন আমদানিকারকরা।
আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে না। চীনের পেঁয়াজে ক্রেতরদর আগ্রহ কম, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের রপ্তানির গুঞ্জন, তার মধ্যে এলসি জটিলতা, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ঋণপত্র খুলতে শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি করা যাচ্ছে না। যার ফলে পেঁয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। এভাবে হলে বাজার আরও চড়া হবে।’
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে। বন্দর থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে চীন ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ এসেছে ১ হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন। যার মধ্যে ডিসেম্বরে এসেছে ৮৮৮ মেট্রিক টন আর জানুয়ারিতে এসছে ৫৬৬ মেট্রিক টন। সে হিসেবে সমুদ্র পথে আমদানি কমেছে প্রায় অর্ধেকের চেয়ে কম।
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশের প্রতি ঝুঁকছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একবার বলে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে, আরেকবার বলে আমদানি করতে। আমাদেরকে নির্দিষ্ট করে নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে, একটা নির্দিষ্ট সময় সরকার ভারত থেকে আমদানি করবে না। তাহলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা বের করবো। আজ আমরা এলসি করলে দেখা যাবে আগামি সপ্তাহে সরকার ভারতীয় পেঁয়াজ আনলো, কোটি কোটি লোকসানের দায় নেবে কে?’
আমদানিতে ডলার ও এলসি জটিলতা নিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এখন বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করতে ঋণপত্র খুলতে ১৫০ শতাংশের বেশি মার্জিন দিতে হয়। তার মধ্যে ডলার সংকট। অনেক ব্যাংক ঋণপত্র খুলছেই না। এখন পেঁয়াজের বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা দোটানার মধ্যে রয়েছে।’
দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় হাব হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর ও পাবনা জেলা। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন এখন শেষ পর্যায়ে। এখন যেসব রোপণ করা হচ্ছে, তা বের হবে মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে।
এ মুহূর্তের সংবাদ