জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা »
শিল্প উপজেলা নামে পরিচিত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পরীক্ষিতভাবে শুরু হয়েছে লবণ চাষ। দিন দিন শিল্প-কারখানা বৃদ্ধির ফলে এই উপজেলায় লবণ শিল্প তেমন সম্ভাবনাময় না হলেও বর্ষা মৌসুমের মাছের ঘেরায় চাষ হচ্ছে লবণের। এর আগেও গত কয়েক বছর যাবৎ পরীক্ষিতভাবে লবণ চাষ করা হলেও আনোয়ারায় এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান উদ্যোক্তারা। সাগরের আশেপাশে নানান পর্যটন কমপ্লেক্স, বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠার কারণে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এখানকার সাগর উপকূলীয় খালি জায়গা।
উপজেলার পারকি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এবার এখানে ৩০ কানি জায়গায় লবণের চাষ করেছেন মোহাম্মদ ফারুক নামের এক উদ্যোক্তা। ফারুকের লবণমাঠে কাজ করছেন মহেশখালী উপজেলার রিদুওয়ান এবং আরমান নামের দুই লবণ শ্রমিক। তারা লবণমাঠ থেকে একেকটি প্লটের তেরপালগুলো কুড়িয়ে সংগ্রহ করছেন লবণ। একটি লবণ প্লটের তেরপাল ভাজ করে লবণ তুলতে সময় লাগে ৪-৫ মিনিট। আর তাদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছেন উদ্যোক্তা ফারুক।
কথা হয় উদ্যোক্তা ফারুকের সাথে। তিনি বলেন, ‘২০১৪-১৫ সাল থেকে জায়গাটা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে লবণ চাষ করে আসছি। তবে গত কয়েক বছর তা বন্ধ ছিল। এবছর আবারও লবণ চাষ শুরু করলাম। আশেপাশে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ হয়ে যাওয়ায় জায়গাটা অনেক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তবুও এবার প্রায় ৩০ কানি জমিতে লবণের চাষ করেছি। প্রতিদিন মহেশখালী, চকরিয়ার ৮-১০ জন শ্রমিক এখানে কাজ করছে। শ্রমিকদের মজুরিসহ সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকা মতো খরচ হবে। এবার লবণের যে দাম আশা করি খরচ পুষিয়ে লাভবান হবো।’ এই লবণগুলো পটিয়া ইন্দ্রফুলসহ বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
লবণ শ্রমিক মহেশখালী উপজেলার মো. রিদুওয়ান জানান, মাঠ শুকিয়ে, জমি ভাগ করে, খোয়া এবং বেট বানিয়ে সব কাজ শেষ করার পর ৩দিনের মধ্যে প্রতি বেট থেকে লবণ উত্তোলন করা যায়। প্রতি কানিতে ২৫০-৩০০ মণ লবণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বারশত ইউপি চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্ বলেন, পারকি এলাকায় লবণ চাষ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হবে। শেষ পর্যন্ত লবণের বর্তমান দাম অব্যাহত থাকলে লবণ চাষিরা লাভবান হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
আনোয়ারায় লবণের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জাফর ইকবালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আনোয়ারায় দিনদিন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। ওখানে আগে থেকেও কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল-এর মত শিল্প কারখানা ছিল, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু টানেল হচ্ছে। চায়না ইকোনমিক জোনর নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। সুতরাং এমন বাণিজ্যিক শিল্প কারখানা সম্ভাবনাময় উপজেলায় লবণ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
বিসিক চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন জানান, লবণ শিল্পের জন্য বাঁশখালী, মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়া বিখ্যাত। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলায়ও কিছু কিছু লবণ চাষ শুরু হয়েছে। তবে শিল্প এলাকায় লবণ চাষের কোনো ভবিষ্যত সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না।