এম এস ফরিদ :
আদিল এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বয়স সাত বছর। আদিল পরিবারের ছোট ছেলে। আদিলের বড়ভাই জামিল এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী। জামিল পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী কিন্তু আদিল একটু ভিন্ন। সে খেলাধুলা আর দুষ্টুমিতে মেতে থাকে সারাদিন। আদিলের বাবা একজন ব্যাংকার আর মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। আদিল তার মায়ের স্কুলেই পড়াশোনা করে। অন্যদিকে জামিল হোমনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। আদিল প্রতিদিন মায়ের সাথে স্কুলে যায়। সকাল হলেই স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে হয় আদিলের মা অর্থাৎ সায়েরা খাতুনকে। ছোট ছেলেকে নিয়ে তিনি কর্মস্থলে যান প্রতিদিন। একদিন হঠাৎ আকাশে ঘন মেঘের আবছা অন্ধকার নামল। পরক্ষণই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষ হয়ে গেল বেশ অন্ধকার। বৃষ্টি যেন আরও বেড়ে গেল। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় হয় অবস্থা। আদিল তার শ্রেণিতেই বসা। সবাই চুপচাপ। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সব ছেলেমেয়ে চাইছে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা বললেন, বাচ্চারা, তোমরা কেউ বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে যাবে না। হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি-ঠান্ডা কিংবা জ¦রও হতে পারে। তাই বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। সবাই মনোযোগ দিয়ে সায়েরা খাতুনের কথা শুনল। স্কুল যথাসময়ে ছুটি হলো কিন্তু কেউ রুম থেকে বের হলো না। এদিকে বৃষ্টি কমতে শুরু করল। তবে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এখনো পড়ছে। আদিল স্কুলের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। হঠাৎ তার চোখে পড়ল স্কুলের দেয়ালের ওপাশে একটা আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আওয়াজটি তার বেশ পরিচিত। মিউ মিউ আওয়াজ। সে দেয়ালের ওপাশে গেল হালকা বৃষ্টির মধ্যেই। গিয়ে দেখে, একটি বিড়ালছানা বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আদিল বিড়ালছানাটিকে কোলে তুলে নিল। আর দৌড়ে বারান্দায় ছুটে আসল। আদিলের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে ছানাটির শরীর মুছে দিল। আদিল মনোস্থির করল যে, ছানাটি তার বেশ পছন্দ হয়েছে। সে বাড়িতে রেখে এটাকে পুষবে। বড় করে তুলবে। আদিল তার মায়ের কাছে গেল। মা, দ্যাখো আমি একটা বিড়ালছানা পেয়েছি। ছানাটি দেয়ালের ওপাশে পড়েছিল। সে খুব অসুস্থ। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগে গেছে। আমি তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।
মা সায়েরা খাতুন ছেলের এই অবস্থা দেখে হতবাক। ছেলেকে কাছে নিয়ে হাতমুখ ও শরীর মুছে দিলেন। বললেন, ঠিক আছে বাবা, তুমি যা বলবে। তবে একে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হই-হুল্লোড় করবে না। পড়ায় মনোযোগী হতে হবে। আদিল সম্মতি দিল, ঠিক আছে মা। ছানাটিকে বাড়িতে নিয়ে গেল আদিল। ছানাটির একটি মিষ্টি নাম রাখা হলো- বিল্লু। আদিল প্রতিদিন বিল্লুকে যতœ নেয়। বিল্লুও ইদানিং খুব নাদুস-নুদুস হয়েছে দেখতে। বাসার অতিরিক্ত খাবার বিল্লুই ভোগ করে। সপ্তাহে দুয়েকদিন চুকচুক করে দুধ খায়। আদিল পড়াশোনার পাশাপাশি বিল্লুর খুব যতœ নেয়। বাসার সবাইর কাছে বিল্লু অনেক আদরের হয়ে ওঠে। এমনকি আদিলের বাবাও বাসায় ফিরে বিল্লুকে খাবার খেতে দেন।
বিল্লু যেন পরিবারের এক সদস্য। মাঝে মাঝে আদিল মাঠে নামিয়ে দেয় বিল্লুকে। দুজনই দৌড়াদৌড়ি করে। রাতে আদিলের খাটের পাশে শুয়ে থাকে বিল্লু। পড়ার সময়ও পড়ার টেবিলের নিচে ঘোরাঘুরি করে। আদিল তার পোষাপ্রাণী বিল্লুকে নিয়ে বেশ আনন্দে সময় কাটায়। বিল্লু চোখের আড়াল হলেই আদিল তার খোঁজ নেয়। মাঝে মাঝে লুকোচুরি করে নিজের খাবার থেকে বিল্লুকে খেতে দেয়। এভাবেই তার খেলার সাথী বিল্লুকে সে ভালোবাসে। আদিল চায় বিল্লু আজীবন তার কাছেই থাকুক, প্রাণী হিসেবে নয় বরং খেলার সাথী হিসেবে। এই যেন প্রাণের সাথে প্রাণের সুসম্পর্ক।
বিল্লু বেঁচে থাকুক আদিলের ¯েœহ-আদরে।