রাজিব শর্মা »
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদার দাম। গত দুই মাসের ব্যবধানে এটির দামও প্রায় আড়াইগুণ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রায় শুন্য এ পণ্য। সঠিকভাবে আমদানির সুযোগ ও খরচ কমালে এ পণ্যের দাম কমার ব্যাপারে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তে চীনা ও দেশি আদা নেই দীর্ঘদিন ধরে। চীনার আদার পরিবর্তে কয়েকটি দোকানে মিলছে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ান আদা। গত এক মাস আগেই বাজারে যে মিয়ানমারের আদা ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা গতকাল বাজারে ২২০ থেকে ২৫০ টাকার উপরে। যা দুই মাসের ব্যবধানে বেড়েছে আড়াইগুণ। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের আদা বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। যা গত এক মাস আগে বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। ইন্দোনেশিয়ান আদা বিক্রি হয়েছে ২৮৫ টাকার উপরে যা গত মাসে বিক্রি হয়েছিল ১৪৫ টাকা। ভারতের কেরালার আদা ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। এদিকে মিয়ানমার ও ভারত থেকে আসা বেশিরভাগ আদাকেই দেশি বলে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জে আদা কিনতে আসা পটিয়া থানা এলাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, কোরবানকে ঘিরে আদার দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। যতই আমদানি সরবরাহ সংকট থাকুক এভাবে দাম বাড়ার কথা না। এসব আড়তদার ও মধ্যস্বত্ব কারবারিদের কারসাজি। আমরা এখান (খাতুনগঞ্জ) থেকে ২৮০ টাকায় আদা কিনে বিক্রি করবো কত টাকা? কোরবানের বাকি এখনো এক মাস রয়েছে। প্রশাসনের এসব বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন। সঠিক তদারকি করলে অস্থিরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছি।
অন্যদিকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে ঘিরে আদার দাম আর কমার তেমন সম্ভাবনা নেই। বরং আমদানি সংকটের কারণে বাজারে আরো দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া দেশে এতদিন ধরে চাহিদা পূরণ করেছে চীনার আদা। আমদানি খরচ বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছে না এ পণ্য। ফলে ইন্দোনেশিয়ান ও মায়ানমারের আদার উপর নির্ভর করছে ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ সংকটের কারণে দিন দিন আদার দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তারা। তবে আমদানি খরচ কমালে এ পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে গতকাল সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, বাজারে দেশি আদা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। যা গত বছরের এ সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দেশি আদার দাম বেড়েছে ১৭৫ শতাংশ।
চাক্তাইয়ের আড়তদার আলিফ ট্রের্ডাসের কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রমজানে ব্যবসায়ীরা চীনা আদার উপর নির্ভর করতে পারছে না। কারণ আমদানিতে প্রতি কেজি আদা কেনায় খরচ পড়ছে ৩০০ টাকার উপরে; যা দেশীয় বাজারে বিক্রি করা সম্ভব না। আপাতত থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের আদা রেখেছি। বর্তমানে উভয়ের দাম ২৫০ টাকার উপরে চলছে। যার ফলে ক্রেতার তেমন চাপ নেই।
আড়তদার ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. খোরশেদুল আলম বলেন, আদার দাম চড়া হওয়ায় আপাতত আমি এ পণ্য বিক্রি করছি না। বাজার অস্থির হওয়ায় মধ্যস্বত্ত কারবারিরা দায়ী। তাদেরকে প্রশাসনের তদারকি করতে হবে।
ফোরকান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ফোরকান বলেন, গত মাসে কিছু আদা ছিল। এখন বাইরে থেকে কোন আদাই আসছে না। তবে কিছুদিন আদা বিক্রি বন্ধ রেখেছি। অন্যদিকে ভারতের কেরালার আদা না আসায় এখন ভুটান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসলেও পর্যাপ্ত না। সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।
এদিকে সরবরাহে ঘাটতির কথা জানালেন খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের আমদানিকারকরাও। ঐ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, বর্তমান বাজারে দেশি ও চীনার আদা একদমই নেই। বলা যায় ‘ মার্কেট শুন্য’। ব্যবসায়ীরা এখন চীনের আদার উপর তেমন নির্ভরশীল না। এখন তারা ইন্দোনেশিয়ান ও মিয়ানমারের আদার উপর নির্ভর করছে। তবে এখন আমদানি করা আদা বাজারে না আসায় কিছুটা সংকট রয়েছে। যার ফলে কিছুটা দাম বাড়তি। তবে কোরবানির ঈদের আগে কিছু আদা বাজারে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আদার বাজারে আমদানি খরচ বৃদ্ধি, শতভাগ ব্যাংক অর্থায়নে মালামাল আনতে হচ্ছে বিধায় অনেক ব্যবসায়ীরা আমদানি বিমুখ হচ্ছেন। তবে আমদানি খরচ কমিয়ে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, দেশে বছরে আদার চাহিদা তিন লাখ টনের। তবে আমদানিকারকদের দাবি, চাহিদা রয়েছে ৬ থেকে ১০ লাখ টনের। দেশে উৎপাদন হয় খুবই কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আদা উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টন। ফলে চাহিদার বড় অংশই মেটাতে হয় আমদানি করে।