স্মরণসভায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, ‘আতাউর রহমান কায়সার বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আদর্শের প্রশ্নে বেঈমানি করেনি। সামরিক শাসকরা তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। তিনি আপোষ করলে সেসময় মন্ত্রী হতে পারতেন। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তিনি যা পেয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। কোন সময় তার মধ্যে না পাওয়ার বেদনা প্রকাশ পায়নি। ১/১১ এর সময়ও তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন।’
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ আরো বলেন, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আতাউর রহমান কায়সার রাজনীতি থেকে শিল্পে, সাহিত্য সর্বত্র সৃজনশীতার পরিচয় দিয়েছেন। সত্যের পক্ষে তার ছিল কঠোর আস্থা। বার বার কারা নির্যাতিত হয়েও তিনি আপোষ করেননি। এক সুন্দর মননের মানুষ আতাউর রহমান কায়সার মানুষকে ভালোবাসতেন অপরিসীম। এটি ছিল রাজনীতির মূল গুণ, অভিজাত্য বোধের সাথে সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার বিরল ভালো মনের পরিচয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আতাউর রহমান খান কায়সার একজন অকুতোভয় নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু দেশ ও জনগণের স্বার্থে কিছু বাস্তব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্তের ফলে কিছু প্রথিতযশা পরিবারের সন্তানরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছিলেন, তারা বিশ্বস্ত থেকে দলের জন্য অশেষ অবদান রেখেছেন, সফল হয়েছেন, আওয়ামী রাজনীতিতে পরিপূর্ণতা এনেছেন। জনমনে তারা অমর হয়ে থাকবেন। আতাউর রহমান খান কায়সার তাদেরই একজন। তিনি বিশেষ কোন গ্রুপ বা কোন্দলে কোন সময় লিপ্ত ছিলেন না। অত্যন্ত সদালাপী, বিনয়ী ছিলেন, একই সাথে আদর্শের প্রশ্নে অনমনীয় আপোষহীন ছিলেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে অনেকেই দুঃসময়ে বেঈমানি করেছে, কিন্তু আতাউর রহমান কায়সার কোনদিন নীতি আদর্শের প্রশ্নে বেঈমানি করেননি। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়ামে স্থান করে দিয়েছিলেন। রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিক হিসেবে তিনি সাফল্য দেখিয়েছিলেন। তাঁর সমস্ত পরিবার আওয়ামী লীগের সুখ-দুঃখের সাথে জড়িয়ে ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি বলেছেন, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসাবে কায়সার ভাই আজীবন যে অবদান রেখেছেন তাতে তিনি একটি বাতিঘরে পরিণত হয়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কাজ করতে গিয়ে বহুবার মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েছেন। খুব বড় মানের অধিকারী ছিলেন কায়সার ভাই। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি তিনি মহত্ব দেখিয়েছেন। বিপদে কর্মীদের পাশে দাঁড়াতেন তিনি। নিখাদ ভদ্র লোক ছিলেন। আওয়ামী পরিবারের একজন নির্ভরযোগ্য অভিভাবক হিসাবে তিনি আমৃত্যু দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। আত্মপ্রচার নয় বরং সেবা’র মনোবৃত্তি তার সমগ্র মানসকে অধিকারী করেছিল। নিজেকে তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁর কর্মের মাঝে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আওয়ামী লীগে আতাউর রহমান খান কায়সারের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি তাঁর মেধা দিয়ে দল ও দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। রাজনীতিতে এখন যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে তা থেকে যদি আমরা উত্তরণের পথ খুঁজি তাহলে এই প্রজন্মের কাছে আতাউর রহমান খান কায়সারদের মতো রাজনীতিবিদদের অবদান তুলে ধরতে হবে।
আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও মরহুমের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি বলেন, রাজনীতি সবাইকে নিয়ে করতে হয়। রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম না থাকলে, সাধারণ মানুষের প্রতি দরদ না থাকলে, লোভ পরিহার করতে না পারলে রাজনীতি হয় না। আমার পিতা সেই শিক্ষা আমাকে দিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগ উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আজকে যখন আদর্শহীনতা রাজনীতিকে গ্রাস করে ফেলছে এই সময়ে কায়সার ভাইকে বেশি স্মরণ করতে হবে। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন রাজনীতিতে নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ কতখানি দরকার।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আতাউর রহমান খান অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মধ্যে চর্চাজাত এক স্বাভাবিক আভিজাত্য ছিল। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রকৃত অর্থেই সমৃদ্ধ করেছিলেন।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম বলেন, রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে দেশ ও দলের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। কায়সার ভাইয়ের মত মহান নেতা বর্তমান সমাজে বিরল।
মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, মানুষ হিসেবে আতাউর রহমান খান কায়সার গৌরবোজ্জ্বল অঙ্গীকার পালন করে গেছেন। লোভকে সম্বরণ করতে পেরেছিলেন তিনি। নানা সময়ে নানা দল থেকে সরকারি উচ্চ আসনের অনেক অফার এমনকি মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব পেয়েও তিনি তা নির্মোহ মানুষের মতো এড়িয়ে যেতে পেরেছেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, লোভ মোহ ত্যাগ করে দুঃসময়ে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন কায়সার ভাই। সারাজীবন সততার রাজনীতি করে তিনি পথিকৃৎ হয়ে আছেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল দাশ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এস এম আবুল কালাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি