নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান »
আজ থেকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা। আষাঢ়ী পূর্ণিমার পর থেকে তিনমাস বর্ষাবাস পালন শেষে শুরু হয় মারমা সম্প্রদায়ের আকর্ষণীয় এ উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা। উৎসবকে ঘিরে মারমা পল্লীগুলোতে চলছে নানা আয়োজন, বইছে আনন্দের বন্যা।
জানা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রতি বছর পূর্ণিমার তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ উৎসবটি পালন করে থাকে। ২০ অক্টোবর থেকে ২ দিনব্যাপী পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পালিত হবে এ উৎসব। এরমধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রথযাত্রা, বিভিন্ন পাড়ায় ও গ্রামে পিঠা তৈরির উৎসব, ফানুস বাতি ওড়ানো, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলনসহ নানা আয়োজন। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বাঁশের তৈরি একটি রথ (পাখি সদৃশ) যুবক যুবতীরা ঐতিহ্যবাহী মার্মা গানের সাথে রথটি টেনে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার প্রদক্ষিণ করে এসময় রথের মধ্যে মোমবাতি আগরবাতি জ¦ালিয়ে উৎসবের শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেয়। আর এ উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্যং ও পাহাড়ি পল্লীতে মারমা যুবক যুবতীরা দলবেঁধে তৈরি করেছে নানা রঙের ফানুসবাতি, রথ ও বেতের তৈরি নানা সামগ্রী।
রোয়াংছড়ির মারমা তরুণী মাসিং খই বলেন, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে খুবই আকর্ষণীয় একটি উৎসব। এ উৎসবে ফানুস উড়াবো তাই অনেক আগে থেকে বন্ধুরা মিলে ফানুস বানিয়েছি পরপের সময় উড়াবো।
উহ্লায়ী মার্মা বলেন, প্রবারণার সময় রথ টানবো পিঠা বানাবো বন্ধুরা মিলে ফানুস উড়াবো খুব মজা হবে। তাই বন্ধুরা মিলে অনেকগুলো ফানুস বানিয়েছি।
তিনমাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার দিন বিহার থেকে বের হয়ে সব বিবাদ ভুলে ও মনের সব সংকীর্ণতা পরিহার করে অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মহামিলনের নিজ সংসারে ফিরে আসা হয়, তাই এই উৎসবে মেতে উঠবে মারমা তরুণ-তরুণী, কিশোর কিশোরী, দায়ক-দায়িকা, উপাসক উপাসিকাসহ সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। শুধু তাই নয় পাহাড়ি বাঙালি ও বাইরে থেকে আগত পর্যটকসহ সবার অংশগ্রহণে মারমাদের এ উৎসবটি হয়ে উঠে সম্প্রীতির মিলন মেলা। তাই এই মহামিলনে সকলের আনন্দকে আরো বেগমান করতে ২ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতার।
উৎসব উৎযাপন কমিটির সভাপতি লাইচিং মার্মা বলেন, প্রতিবছরের মত এবারও ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমার আয়োজন করেছি। তবে করোনা মহামারীর কারণে এবার আমাদের অনুষ্ঠানমালা কিছুটা সীমিত করা হয়েছে। প্রত্যেকবার ৩ দিন ৪ দিন অনুষ্ঠান করলেও এবার ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান পালন করব। প্রথমদিন ফানুস উড়ানো হবে রাতে পিঠা তৈরি করা হবে ৫টি পয়েন্টে এবং পরের দিন রথ টেনে মন্দির গুলো প্রদক্ষিণ শেষে নদীতে বিসর্জনের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এদিকে উৎসব পালনে যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় এবং নিরাপদে যাতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এই উৎসবকে ঘিরে প্রায় সময়ই দেশি বিদেশি পর্যটকেরা বান্দরবান আসে। তাই এই অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আশা করি সবাই নিরাপদে মিলেমিশে উৎসব উদযাপন করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের উৎসব। আর এই প্রাণের উৎসবে ভগবান বুদ্ধকে মনের আশা পূরণের জন্য কাগজে ফানুস বাতি তৈরি করে তাতে আগুন দিয়ে আকাশে উড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্ধার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল তাই বুদ্ধের ত্রিশুল বিজড়িত এদিনটি প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ স্মরণীয় হয়ে আছে।