নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
পুষ্প জলদাস (৪৭)। ২৫ বছর আগে ১৯৯৭ সালে স্বামী সুধাংশু জলদাস ৪ ছেলে সুকুমার, রাজ কুমার, রাজীব, সজীব এবং ১ মেয়ে স্বপ্না নামের ৫ শিশু সন্তানদের রেখে মারা যান। তখন ভয়ংকর এক যুদ্ধ নেমে আসে বিধবা পুস্পের সংসারে। ২৫ বছর ধরে সমুদ্র থেকে জেলেদের ধরে আনা মাছ জ্বলকদর খালের পাড়ে মাছ বাছাই করে, হাঁস-মুরগী পোষে এবং এ বাড়ি-ও বাড়ি গৃহকর্মীর কাজ করে ছেলেদের বড় করে তোলেন। ছেলেরা যখন বড় হয়েছে সংসারে ধীরে ধীরে একটু সুখের মুখ ফিরে এসেছিল। দুই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন এবং এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে সুখ আর থাকল না। তিল তিল করে জমানো সংসারের যাবতীয় জিনিস গত মঙ্গলবার রাত ৩টায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এমন করে তার মতো আরও ৫৫ পরিবারের একই দশা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল জলদাস পাড়ায় পোড়া ভিটায় ত্রিপলের নিচে বসে ঘর হারানো পুস্প জলদাস আরও বলেন, কখন ঘর খাড়া করতে পারি জানি না, ত্রিপলের নিচে ভয়ংকর কষ্টে আছি। বৃষ্টি পড়লে ভিজি, রোদে প্রচ- গরমে নাতি-নাতনি, ছেলে বউ ও ছেলেদের নিয়ে কষ্টে আছি।
পোড়া ভিটায় পুস্প জলদাসের পাশে বসা তার বিধবা মা মনিবালা জলদাস (৭৮) বলেন, ৬০ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছিল। আমার মেয়েকেও এই পাড়ায় বিয়ে দিয়েছি। এই জেলে পাড়ায় আমার ৬০ বছরে এরকম আগুনের ভয়ংকর অবস্থা দেখিনি। দানবের মতো এসে আগুন আমাদের পাড়ার ৫৬টি পরিবারের সব শেষ করে দিয়েছে। পাড়ার শতাধিক মানুষ কষ্টে আছে। এখন বেলা দেড়টা বাজে আমরা কেউ চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারিনি। প্রত্যেক ঘরে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে। শুনেছি দুপুরে কোথা থেকে খাবার আসবে, আমরা ওই খাবার খাব। কিন্তু এখনো আসেনি। এই পাড়ার অধিকাংশ ঘরের পুরুষরা ১০/১২ দিন আগে গভীর সাগরে মাছ ধরতে গেছে। পুরুষরা না থাকায় পোড়াবাড়িও খাড়া করা যাচ্ছে না। গভীর সাগরে খবরও পৌঁছানো যাচ্ছে না।
পশ্চিম চাম্বল জেলে পাড়ার সভাপতি গুরুধন জলদাস বলেন, আমরা প্রত্যেকে খুবই গরিব। সরকারের সহযোগিতা না পেলে আমরা পোড়া ভিটায় ঘর তুলতে পারবো না। জেলে পেশা আমাদের বাপ-দাদার পেশা তা ছেড়ে যেতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকারি সহযোগিতার জন্য পুড়ে যাওয়া প্রত্যেক পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের যাতে কোন ভোগান্তি পেতে না হয় সেজন্য সার্বক্ষণিতক তদারকি করা হচ্ছে।