নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। হয়তো দু’এক দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। কাজেই জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেবে।’
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রামের ১৭টি প্রকল্প উদ্বোধনকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর এই বাংলাদেশ দেখে কেউ বলতে পারবে না যে, এই বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, বাংলাদেশ ক্ষুধা বা হাত পেতে চলার দেশ। না, আমরা এখন একটা মর্যাদাশীল দেশ, উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের সেই মর্যাদাটা আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, যেটা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে আমরা পেয়েছিলাম। আজকে আবার আমরা সেই জায়গায় এসেছি।’
দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কেউ অবহেলিত থাকবে না এবং সবাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে।
আমাদের যে লক্ষ্য, সে লক্ষ্য স্থির করে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি বলেই ২১ সালের মধ্যে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। সকলের সহযোগিতায় এত দ্রুত আমরা দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। মাত্র তো ১৪ বছরে এই পরিবর্তন। এ দেশটাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
আগামী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন সামনে আমাদের ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা অনেক সুবিধা পাব। আবার স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা আমরা পাব না। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সুবিধাগুলো নিয়ে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব সেই পরিকল্পনা নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বিএনপি-জামায়াতের কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি এদেশের মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে এই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস। গাড়িতে আগুন, বাসে আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত করা হচ্ছে, স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ঠিকভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে। আমি এটুকু বলবো যে, ওদের সুমতি হোক। এই ধ্বংসযজ্ঞ তারা বন্ধ করুক। অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক।’
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকেও বলবো, এই অগ্নিসন্ত্রাস আপনাদের প্রতিরোধ করতে হবে। সকলেরই জানমাল আছে। ২০১৩, ১৪ ও পরবর্তী সময়ে যে অগ্নিসন্ত্রাস, ভুক্তভোগীদের যন্ত্রণা ও কষ্ট আমরা দেখেছি। কাজেই এই ভোগান্তি যেন মানুষের আর না হয়। একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’
নির্বাচন বানচাল ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে নির্বাচনে আসতে চায় না। কারণ, যারা ৩০টি সিট পেয়েছিল (২০০৮ সালে) স্বাভাবিকভাবে তাদের নির্বাচনে আসার কোনো আকাক্সক্ষাই থাকবে না। নির্বাচন বানচাল করে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আবার বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলাই তাদের চেষ্টা।’
উন্নয়নে পথে বাংলাদেশের যাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজ আমি খুব আনন্দিত। সারাদেশে ২৪টি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন করা ১৫৭টি প্রকল্পের ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামো একসঙ্গে উদ্বোধন হচ্ছে। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।
যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পুরো পরিবারকে হত্যার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় বসেছে। প্রধানমন্ত্রীও হয়েছে। তারা যখন ক্ষমতায় তখন আমি দেশে ছিলাম। ভয়কে প্রশ্রয় দেয়নি। এরপর অনেক লড়াই সংগ্রাম করেছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এ পথ মসৃণ ছিল না। গ্রেনেড হামলা হয়েছে, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আমার লক্ষ্য স্থির ছিল। তাই ক্ষমতায় এসে দেশকে আজ এ জায়গায় আনতে পেরেছি। এ সরকার যা যা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেশকিছু আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকি যেগুলো আছে সেগুলোও উদ্বোধন করে গেলাম। দেশের মানুষ চাইলে আবার ক্ষমতায় এসে দেশকে আরও উন্নত করব।’
এ সময় গণভবনের সঙ্গে ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারাদেশে ১০১টি প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিল।