১৩৫তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক »
কর্ণফুলীর তীরে ১৩৫ বছর বয়সী চট্টগ্রাম বন্দর, হালিশহর সাগর পাড়ে নির্মিত হচ্ছে বে টার্মিনাল, মহেশখালীর মাতারবাড়ি নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। এ তিন বন্দরই আগামীর চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য প্রয়োজন। মাতারবাড়ি হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে বিজনেস হাব, বে টার্মিনাল হবে বড় জাহাজ ভেড়ানোর জায়গা এবং বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দর হবে ছোটো জাহাজ ভেড়ানোর উপযুক্ত স্থান। এ তিন বন্দরের সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সেইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি। ১৩৫তম বন্দর দিবস উপলক্ষে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান এভাবেই নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন।
মাতারবাড়ি কিংবা বে টার্মিনাল চালু হলে কি বর্তমান বন্দর পরিত্যক্ত হয়ে যাবে? তা মোটেই হবে না উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ২০২৫ সালে মাতারবাড়ি বন্দর এবং একইসময়ে বে টার্মিনাল চালু হবার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এরমধ্যে মাতারবাড়িতে ১৮ মিটার ড্রাফটের এবং বে টার্মিনালে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। কিন্তু তারপরও বিদ্যমান বন্দর পরিত্যক্ত হবে না।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ি হবে সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা কিংবা মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরের বিকল্প। বড় বড় মাদারভেসেলগুলো মাতারবাড়িতে এসে পণ্য দিয়ে যাবে। সেখান থেকে ফিডার জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান জেটিতে, মোংলা, পায়রাসহ আশপাশের দেশের বন্দরগুলোতে পণ্য আনা নেওয়া করবে। তাই কোনোভাবেই বিদ্যমান বন্দর পরিত্যক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
বিদ্যমান বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ বাড়ছে উল্লেখ করে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বন্দরে আগে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতো। আগামীতে এই বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করবে।
বে টার্মিনালের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আমরা প্রতীকি মূল্যে বে টার্মিনালের অবশিষ্ট ভূমির বরাদ্দ চাই। এজন্য ইতিমধ্যে একটি পত্র আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এবিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা আসবে।
এছাড়া বে টার্মিনালের ভৌতিক কাজ দেখা না গেলেও প্ল্যানিং পর্যায়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বে টার্মিনালের কাজ থেমে নেই। পরিকল্পনার কাজটি চোখে দেখা যায় না। কিন্ত পরিকল্পনা করেই সামনে এগুতে হয়। আমরা এখন সেই কাজটি শেষ করছি।
ইউরোপের বন্দরের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস
সোঙ্গাচিতা জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবারের মতো ইটালিতে সরাসরি পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সোঙ্গা চিতার পর চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের আরো বেশ কটি জাহাজ সরাসরি কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া এরমধ্যে অন্যতম। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাইয়ের একাধিক বন্দরও সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালুর আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠার প্রমাণ মিলে।
জুনে চালু হবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের অগ্রগতি নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বছরে সাড়ে ৪ লাখ একক কনটেইার উঠানামার লক্ষ নিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও ২২০ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগামী জুলাইতে পিসিটির কার্যক্রম শুরু হবে।
জুনে শেষ হচ্ছে ক্যাপিটার ড্রেজিংয়ের কাজ
কর্ণফুলী নদীর বহুল আলোচিত ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ নিয়ে এম শাহজাহান বলেন, এই প্রকল্পের সুফল ইতোমধ্যে আপনারা পেয়েছেন। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং কাজ চলমান থাকবে। এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে; মোট প্রকল্পে ব্যয় ছিল ২৯৫ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় আমরা চারটি লাইটার জেটি চালু করেছি সদরঘাট এলাকায়। এছাড়া কর্ণফুলীর সাথে সংযুক্ত খালগুলো দিয়ে আবর্জনা আসা কমে গেলে নগরবাসী ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের সুবিধা পাবে।
কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, বন্দরের অংশের প্রায় সবই স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। দুটি স্থাপনা আছে আদালত রায় দিলে আমার দ্রুত উচ্ছেদ শুরু করবো। আর বাকি অবৈধ স্থাপনা বন্দরের নয়, জেলা প্রশাসনসহ অন্য সংস্থার হতে পারে।
এদিকে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের দুই বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে পাওয়ার প্রেজেন্টেশন দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম। তার উপস্থাপনায় করোনা মহামারির দুই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের এগিয়ে যাওয়া এবং কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে তার বর্ণনা ছিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান, বন্দরের সব বিভাগীয় প্রধান ও সিবিএ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।