নিজস্ব প্রতিবেদক »
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল ‘কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে’ উম্মে হাবিবা (রুদবা) নামে এক ১৭ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তুলেছেন তার পরিবার।
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) কর্তব্যরত চিকিৎসক না থাকায় বাইরে থেকে রোগী দেখতে আসা চিকিৎসক শনাক্ত করেছেন শিশুটি মারা গেছে।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা গেছে।
শিশুটির মামা রাজু সুপ্রভাতকে বলেন, ‘৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হলে ভাগ্নী রুদবাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। পরদিন শনিবার ডাক্তারের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল রুদবা। শুক্রবার দুপুরে রক্ত দিতে হবে জানালে রক্তও জোগাড় করে দেওয়া হয়। দুপুরে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে রুদবাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে রুদবাকে দেখতে গিয়ে তার বাবা দেখতে পেয়েছেন রক্ত চলছে না, রক্ত কেন চলছে না জানতে চাইলে নার্স কিছু বলতে পারেনি। সে সময় আইসিইউ ইউনিটে দায়িত্বরত কোন চিকিৎসক ছিলেন না। আমাদের পরিচিত এক চিকিৎসক এসে দেখতে পেয়েছেন রুদবা মারা গেছে।
দেখতে আসা লাইয়ন্সের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শহিদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমি গিয়ে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। যাওয়ার মিনিট কয়েক আগে মনে হয় মারা গেছে। শিশুটিকে আগে থেকে চিনি। নগরীর খুলশী ঝাউতলা এলাকায় আমার চেম্বার। এলাকার রোগী হওয়ায় তাকে দেখতে ডাকা হয়েছিল।’
এ বিষয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হুদা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আইসিইউতে সব সময় ডাক্তার থাকে।’ ওই সময় কোন ডাক্তার ডিউটিতে ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোস্টারিং ডিউটি করা থাকে আজ কার সিডিউল ছিল তা জানা নেই। শিশুটির পরিবার চাইলে অভিযোগ দিতে পারে। ওরা অভিযোগ দিলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে শিশুটির পরিবার বলছেন, ‘রুদবা মারা যাওয়ার পরও আইসিইউর কর্তব্যরত কেউ এ বিষয়ে জানে না। তবে আইসিইউর মত একটা ইউনিটে ডাক্তার না থাকার ঘটনাটি নিশ্চয় ক্ষমাযোগ্য অপরাধ নয়। কিন্তু এ ঘটনার পর থেকে আইসিইউ ইউনিটের সকলে দূরে সরে রয়েছে।’
রুদবার মামা রাজু বলেন, ‘লাশ ঘরে নেওয়ার জন্য আমরা বিল কত এসেছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বিল না দিয়ে হাতে মৃত্যু সনদ দেয়। বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডেস্ক থেকে জানানো হয়, বিল এখন দেওয়া হবে না আরও সময় লাগবে। এদিকে তাদের এমন খাম খেয়ালিপনা দেখে লাশ নিয়ে বেরিয়ে গেলেও কেউ বিল পেমেন্টের রশিদ ও ডিসচার্জ পেপার চায়নি। যেখানে বিল পেমেন্টের রশিদ ছাড়া হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে বের হতে দেয় না। সেখানে লাশ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও কেউ আটকালো না।’
কেন বিল নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘তারা হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তারা বিল দিয়ে অভিযোগ করে যাক। তদন্ত করে দেখব। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
এসময় পরিবারের অন্য সদস্যরা বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিস্টেম ঠিক না থাকার কারণে রুদবা মারা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো না। তবে আমাদের দাবি তারা যেন এসব বিষয়ে সজাগ হয়। রোগীদের যত্নসহকারে সেবা প্রদান করে।’