সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘টেস্ট জিতলেই হবে না, ডমিনেট করতে হবে’- এমন প্রত্যাশা ম্যাচের আগের দিন জানিয়ে এসেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু দিন শেষে পুরো দলই হতাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট বক্সে বসেই বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টের প্রথম দিনের খেলা দেখছিলেন নাজমুল হাসান। কিন্তু দিনের শেষ বলে তামিম ইকবালের আউটে হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারলেন না তিনি। রাগে আর ক্ষোভে তার চোখে মুখে ফুটে উঠলো বিরক্তি। অথচ নবীন একটি দলের বিপক্ষে কেবল বোর্ড প্রধানই নন, ক্রিকেটপ্রেমীদের সবার প্রত্যাশাই ছিল প্রভাব বিস্তারকারী ক্রিকেট।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষেআয়ারল্যান্ড তাদের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামে, যে দলের ১১ জনের মধ্যে ৭ জনের অভিষেক হয়েছে। অভিষিক্তদের আবার খুব বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলারও অভিজ্ঞতা নেই। এমন একটি আনকোড়া দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলতে হতো প্রভাব বিস্তার করা ক্রিকেট। কিন্তু দিন শেষে সেখানে ব্যর্থ স্বাগতিকরা। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং; এমনকি অধিনায়কত্বের পারফেকশন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে! দিনের বেশির ভাগ সময় মাঠে থাকলেও সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা সেভাবে পাওয়া যায়নি।
টসের সময় একাদশ দেখে বিস্মিত হতে হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। ৯ বছর পর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল তিন পেসার নিয়ে। এছাড়া একজন ব্যাটার কমিয়ে বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ ছয় বোলারদের নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে। এমন কিছু কল্পনাতেও যেখানে অসম্ভব ছিল, সেখানে আইরিশদের বিপক্ষেএই কাজটিই করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এমন কিছুর পর ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির পর হয়তো টেস্টে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা নিজেদের অ্যাপ্রোচ পরিবর্তন করে সাফল্যের খোঁজ করছেন!
টস হেরে বোলিংয় করতে নেমে দুই প্রান্ত দুই পেসারদের আক্রমণ দেখে তেমন কিছুর আভাসই দেখা যাচ্ছিল। প্রথম দশ ওভারে শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ মিলে ভালোই চাপ তৈরি করছিল। দুই জন মিলে আইরিশদের দুই উইকেট তুলে নেন ২৭ রানেই। দশ ওভার শেষে আক্রমণে নিয়ে আসা হয় ইবাদত হোসেনকে। তার কিছুক্ষণ পরেই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ আক্রমণে আসেন। ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারনো আইরিশরা চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন। কার্টিস ক্যাম্ফার ও হ্যারি টেক্টর মিলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন। অভিষেক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া টেক্টরকে (৫০) ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন মিরাজ। এরপর দুই রানের মধ্যে আর দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তখনও বল হাতে নেননি বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব। ৬৫ ওভার শেষে বোলিংয়ে এসে তিন ওভার করেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
ম্যাচের বেশিরভাগ সময় মাঠে থাকলেও সাকিবের ফোকাস ছিল নড়বড়ে। বোলিং পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি তাকে। অথচ মিরপুরের এই উইকেটে বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজ ৭৭.২ ওভারের মধ্যে ৪৫.২ ওভার করেছেন, উইকেটও তুলে নিয়েছেন সাতটি। যেখানে স্পিনাররা সফল হচ্ছেন, সেখানে সাকিবের বোলিংয়ে না আশাটা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ!
শুধু তাই নয়, শুরুতেই দুটি রিভিউ নষ্ট করেন সাকিব। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ তিনটি রিভিউ নিয়ে তিনটিই নষ্ট করেছে। এইসব কিছুর ফাঁক গলিয়ে আইরিশরা ৭৭.২ ওভারে ২১৪ রান তুলে ফেলে। বাংলাদেশের যেমন বোলিং আক্রমণ, সেই হিসেবে নিশ্চিতভাবে এত রান হওয়ার কথা নয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ বোলার সাকিব শুরু থেকে আক্রমণে থাকলে হয়তো দেড়শোর নিচেই আটকে রাখা যেতো আয়ারল্যান্ডকে! খবর বাংলাট্রিবিউন।
এরপর শেষ বিকালে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। প্রথম ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত গোল্ডেন ডাক মারেন। দিনের খেলা শেষ হওয়ার বলে অভিজ্ঞ তামিমও সাজঘরে ফিরেছেন। আয়ারল্যান্ডের নবীন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেদিনশেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ তুলেছে।
প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ পিছিয়ে ১৮০ রানে। বুধবার নতুন দিনে অভিজ্ঞ বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, সেটিই দেখার।