নিজস্ব প্রতিবেদক »
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর ডিমের দাম ডজনে কমেছে ১০ টাকা। চলতি মাসের ৮ তারিখ সরকার চিনির দর নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে সে দরে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বরং সপÍাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ১৩০ টাকা ছাড়িয়েছে চিনি। ক্রেতারা দুষছেন বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও বক্সিরহাট কাঁচাবাজার দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৭৫ থেকে ২৯০ টাকা। তাছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কমলেও সোনালি মুরগি ও দেশি মুরগির দাম কমেনি। বাজারে সোনালি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৩৫৫ টাকা ও দেশি ৬৫০ টাকা উপরে।
মুরগি সরবরাহকারী মো. মোজ্জাম্মেল হক বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আজকে (বৃহস্পতিবার বিকালে) বাজারে ২৫০ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে অতিরিক্ত গরম ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকাতেই ডিমের চাহিদা কমেছে। যার ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে ডজনে ১০ টাকা। বাজারে লেয়ার মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। যা গত সপÍাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
বকসির বাজারের ডিম ব্যবসায়ী কালাম সওদাগর বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে বেশি ডিম নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া ঈদে ক্রেতাদের ডিমে আগ্রহ কম ছিল। যার ফলে ডজনে ১০ টাকা কমেছে। বলা যায় ব্যবসায়ীরা লোকসানে ডিম বিক্রি করছে।
এদিকে চলতি মাসের ৬ তারিখ চিনির বাজার দর নির্ধারণ করে দেন সরকার। পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল কেজিতে ১০৪ টাকা। আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল কেজিতে ১০৯ টাকা। যা চলতি মাসের ৮ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল বিশ দিন পার হলেও যে পণ্যের বাজারে কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। অস্থির চিনির বাজারে এক সপÍাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। দিন দিন এ পণ্যের কেন দাম বাড়ছে জানেন না ব্যবসায়ীরা।
গতকাল খাতুনগঞ্জ, রেয়াজউদ্দিন ও বকসির হাটের খুচরা বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১২৮ থেকে ১৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ঈদকে কেন্দ্র করে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
বকসির হাটের ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী বলেন, আমরা খাতুনগঞ্জ থেকে কিনেছি ১১৫ টাকার উপরে। যার ফলে খরচাদি হিসেব করে আমাদেরকে ১২৮ টাকার উপরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাক্তাই এলাকায় খুচরা মুদির দোকানে চিনি কিনতে আসা মো. সিরাজ নামের এক ব্যক্তি বলেন, রমজানের শুরুতে নিত্যপণ্যের বাজারে বেশ কিছু অভিযান চললেও ২০ রোজার পর তেমন দেখিনি। প্রশাসনের অনুপস্থিতির সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে রমজানের মাঝামাঝি থেকে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ব্যবসায়ীরা ১২৮ থেকে ১৩০ টাকার উপরে চিনি বিক্রি করছে।
অস্থির চিনির বাজার তদারকির বিষয়ে জানতে ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।
চিনির বাজার তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহ পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘সরকার চিনির বাজার দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আমরা কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। এরপর বিভিন্ন নির্দেশনার কারণে আমাদেরকে ঈদ মার্কেট তদারকি করতে হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে চিনির বাজারের অস্থিরতা নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ আমাদের হাতে এসছে। আমরা শ্রীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করবো।’
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কমেনি। গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে মাংস কেনার চাপ থাকলেও এখন কোন চাপ নেই। কিন্তু গরুর খামারিরা গরুর দাম না কমালে আমরা মাংসের দাম কমাতে পারছি না। গতকাল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে হাড়সহ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও হাঁড় ছাড়া মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা।
এদিকে বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম রয়েছে স্থিতিতে। আড়াইশো টাকার নিচে তেমন ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বাজারে মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। বড় পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। চাষের রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকায়, কাতলা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া চিংড়ি সাইজভেদে বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
বকসিরহাটে মাছ কিনতে আসা মো. এরশাদ বলেন, ‘শুক্রবার ঈদের মেহমান আসবে। তাই মাছ কিনতে আসা। মাছের যে দাম শবে কদরের দিন একবার মাছ কিনছিলাম আর আজকে। দুইশোর টাকার নিচে কোন মাছই নেই।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আলু, বরবটি ও টমেটো ছাড়া সকল ধরনের গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম বেশ চড়া। ঝিঙ্গা, করলা, কাকরোল, ঢেঁড়সের দাম ১০০ টাকার উপরে। এছাড়া ঈদের পর বাজারে তেমন সবজি না আসাতেই সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের সবজিতে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে বলে জানান সবজি ব্যবসায়ীরা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ইসমাইল সওদাগর বলেন, ঈদের পর তেমন সবজি এখনো বাজারে আসেনি। গুদামে যা ছিল তা বিক্রি করা হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে আসলে দাম কমা সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল রেয়াজউদ্দিন বাজারে ভালো মানের বেগুন বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা। টমেটো বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা। কাঁচাকলা ৩০ টাকা হালি, ঝিঙ্গা ১২০ টাকা, তিতা করলা প্রতিকেজি ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. কামরুল বলেন, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের মধ্যে শীতকালীন সবজির দাম কম থাকাতেই বেশ কয়েকমাস ধরে কিছুটা স¦স্তি পেয়েছি। কিন্তু এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে তেমন আসেনি। যার ফলে প্রায় সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার উপরে।