বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্যে দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বেশি বলা হয়েছে। এর মধ্যে হৃদরোগে (হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ডিজিজ) মৃত্যু ২ লাখ ২৪ হাজারের বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেশে ৭৫ ধরণের রোগ ও সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে মৃত্যু ঘটে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৩ জনের যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩.৮% বেশি। দেশে বিগত বছরে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭৫ শতাংশ ঘটেছে অসংক্রামক রোগে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ১২৩০৬ জনের। বিবিএসএর সংশ্লিষ্ট পরিচালক জানান, সারা দেশে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২ হাজার ১২টি এলাকা জরিপের জন্য বাছাই করা হয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকে এতদসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে অসংক্রামক রোগের ভয়াবহ বিস্তৃতি ঘটেছে। গত বছর করোনার কারণেÑএ সব রোগের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে। করোনার সময় কিডনি রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হয়। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা জীবনযাত্রার ধরণ পাল্টানো, চর্বি ও ভেজাল জাতীয় খাবার গ্রহণ, দৈনিক পরিশ্রম কম করা, ধূমপানÑ এসব অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রতিবেদনে (ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট ২০১৫-১৭) বলা হয়েছে, প্রতি বছর হাসপাতালটিতে যত করোনা রোগী শনাক্ত হয় তার এক তৃতীয়াংশ সাধারণ কৃষক।
আমাদের দেশে স্বাস্থ্য অবকাঠামো থাকলেও চিকিৎসাসেবা সহজ ও সুলভ নয়। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের বরাদ্দ কম। এ খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে অসংক্রামক রোগের বিস্তৃতি রোধ করা সম্ভব হবে না। গরিব ও নি¤œবিত্তদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার কারণেও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র করোনাকালে প্রকট হয়েছে। পরিবেশ দূষণ বিশেষ করে বায়ুদূষণজনিত নানা রোগে গত বছর ১ লাখেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। ভেজাল খাবার, কীটনাশক ও রাসায়নিক মেশানো শাকসবজি গ্রহণ ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগ সংক্রমণের কারণ।
সরকারিভাবে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। জেলাÑউপজেলা পর্যায়ে সংক্রামক রোগের চিকিৎসা সুবিধা ব্যাহত যাতে না হয় সেজন্য জেলাÑউপজেলা হাসপাতালে আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী সরঞ্জাম-যন্ত্রপাতি থাকা আবশ্যক। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট এসব রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। অসংক্রামক রোগের বিস্তৃতি রোধে প্রতিরোধÑ-প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাদি নেওয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির সচেতনতা তথা জীবনযাত্রায় পরিমিতি, ব্যায়াম চর্চা, সুষম ও বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণ প্রয়োজন। অসংক্রামক রোগের পাশাপাশি প্রাণিবাহিত রোগ সম্পর্কেও আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সকল প্রকার পরিবেশ দূষণ, ভেজাল ও অতিমাত্রায় রাসায়নিক, কীটনাশকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকার ও সকল মহলের সচেতন পদক্ষেপ জরুরি। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা রোধে আইনের প্রয়োগ কঠোর করতে হবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও সংক্রমণ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন, গবেষণা ছাড়া প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন। সরকারি হাসপাতালগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত লোকবল ও সরঞ্জাম-যন্ত্রপাতির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়