‘অমনি প্রসেসর’ এক নব অধ্যায়ের সূচনা করবে

পয়োবর্জ্য থেকে রোগজীবাণু দূর করে জ্বালানি ও ডিস্টিলড পানির মতো বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক উপজাত তৈরির প্ল্যান্টই হচ্ছে ‘অমনি প্রসেসর’। এর সাহায্যে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, ডিস্টিলড পানি, অ্যাস উৎপাদন করা হয়। এ প্রকল্পে প্রতিদিন ৩০ ঘনমিটার বা ৬ টন শুকনো পয়োবর্জ্য, ৫ টন জৈব বর্জ্য, ৫০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে মোট ১১.৫ টন বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই মূল প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি চালু রাখা হয়। ফলে এই প্রকল্পের জন্য কোনো ধরনের জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বা ভিন্ন কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।
প্রকল্পের বর্জ্য পরিশোধনের পর প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ লিটার ডিস্টিলড পানি উৎপাদন করা যাবে। পানিতে কোনো আয়ন বা কঠিন পদার্থ বা লবণ নেই, শুধু হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আয়ন আছে, যা ব্যাটারি তৈরির জন্য বাজারজাত করা যাবে।
একই সঙ্গে প্রকল্প থেকে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি অ্যাস-যা সিমেন্ট উৎপাদনসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।
সেনেগাল ও ভারতের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। , কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ৪ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে।
প্রকল্পটির কাজ পায় ভারতের অংকুর সায়েন্টিফিক ও বাংলাদেশের এসআর করপোরেশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শতভাগ ভৌত অগ্রগতি শেষে এখন প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
চুক্তি অনুসারে, ভারতের অংকুর সায়েন্টিফিক তাদের নিজস্ব দক্ষ জনবল দিয়ে প্রকল্পটি পরিচালনা করছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে অংকুর বাংলাদেশের এসআর করপোরেশনের নিজস্ব লোককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলবে। এরপর প্রকল্পটি এসআরকে বুঝিয়ে দেবে।
এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে বটে তবে আমরা মনে করছি প্রকল্পটি সফল হবে। বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এটা সফল হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হবে। দেশের মহানগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এক কঠিন কাজ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। কয়েকবার শোনা গিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করবে। কিন্তু সেসব পরিকল্পনাতেই রয়ে গেছে বাস্তবের মুখ দেখেনি। ‘অমনি প্রসেসর’ সাফল্যের মুখ দেখলে তা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে মহানগরগুলোতে চালু করা যাবে। তাই সঙ্গত কারণেই এই প্রকল্পের সাফল্য কামনা করি আমরা।