রেফারি সমিতির কার্যালয়ে জুয়া
প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি
নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদকm >>
সম্প্রতি সময়ে আলোচিত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জুয়ার আসর পরিচালনায় রেফারি সমিতির সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরণসহ তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। রেফারি সমিতি’র কার্যালয়ে জুয়া খেলার অনুমতি এবং জুয়া খেলা আয়োজনে জড়িত থাকার বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মিরনকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আওতাধীন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসহ এর আওতাধীন সকল স্থাপনায় প্রবেশাধিকার, সকল প্রকার ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ড হতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণা করার জন্য সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির সভাপতি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। সংস্থার গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও সংস্থার সহ-সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান গতকাল দুপুরে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির সভাপতি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেন।
প্রতিবেদন পেয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন তদন্ত কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শীঘ্রই জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটির সভা আহবান করে সুপারিশগুলো বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই সাথে জুয়ার সাথে জড়িত প্রমাণ পাওয়ায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে ৩ বছর বহিষ্কার এবং নির্বাহী সদস্য বিশ^জিত সাহাকে ২ বছর বহিষ্কার ও নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি’র কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্য বিদ্যুৎ বিল আনুমানিক দশ লক্ষ টাকাসহ প্রকৃত বিদ্যুৎ বিল আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, জুয়া খেলার বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তিতে ১ম পক্ষ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কথা উল্লেখ রয়েছে। জুয়ার ব্যাপারে চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী অগ্রিম বাবদ তিন লক্ষ টাকা, দৈনিক চার হাজার টাকা করে প্রতি মাসে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা করে ১ম ১২ মাস চৌদ্দ লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা এবং পরবর্তী ৬ মাস দৈনিক চার হাজার পাঁচশত টাকা করে প্রতি মাসে এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা হিসাবে ৬ মাসে আট লক্ষ দশ হাজার টাকা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য নেওয়া মাসে চল্লিশ হাজার টাকা করে ১৮ মাসে সাত লক্ষ বিশ হাজার টাকা। এ নিয়ে সর্বমোট বত্রিশ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মিরনের কাছ থেকে আদায় পূর্বক অ্যাসোসিয়েশনের কোষাগারে জমাদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বলা হয়। এছাড়াও প্রাপ্ত আঠারো মাসের হিসাবের অতিরিক্ত গত ১ জুন পুলিশের অভিযানের পূর্ব পর্যন্ত জুয়া খেলা থেকে কি পরিমাণ আয় হয়েছে তা তদন্তে বের করা সম্ভব হয়নি।
অ্যাসোসিয়েশনের পিয়ন গোবিন্দ দাশ তদন্ত কমিটির কাছে তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি সমিতিতে বিগত ৪ বছর যাবৎ পিয়ন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। চাকরির পর থেকে উক্ত সমিতিতে নিয়মিত টাকার বিনিময়ে তাস খেলা হতো। জুয়া খেলা চলাকালীন সময়ে পিয়ন হিসেবে অফিসের কাজের বাইরে তাদের জন্য চা-নাস্তা এনে দিতাম। জুয়া খেলার টাকা আবদুল হান্নান মিরন ও ফরহাদ হোসেন গ্রহণ করত। মাঝখানে জুয়া খেলা কিছুদিন বন্ধ ছিল। বিগত রোজাতে পুনরায় তাস খেলা শুরু হয় এবং পুলিশ যেদিন অভিযান চালায় সেদিনও জুয়া খেলা চলছিল। আবদুল হান্নান মিরন আটক জুয়ারীদের আমার বন্ধু-বান্ধব বলতে বলেছেন।’
সিজেকেএস’র প্রাপ্য বিদ্যুৎ বিল আনুমানিক দশ লক্ষ টাকা সিজেকেএস কোষাগারে জমাদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবর সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত জুয়া খেলার বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে তাদের ভূমিকা রহস্যজনক এবং দায়িত্বহীনতার সামিল। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসোসিয়েশনে আলোচ্য অনৈতিক কাজ চুক্তির মাধ্যমে চলে আসার বিষয়টি সম্পর্কে তারা নীরব ছিলেন। এর প্রেক্ষিতে আগামীতে এ বিষয়ে অধিকতর সতর্ক থাকার জন্য তাদেরকে তিরষ্কার করার কথা বলা হয়েছে। যায়। একই সঙ্গে বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবর সুপারিশ করা হলো।
চুক্তিপত্রে ২য় পক্ষ হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সীমান্ত সেন, তার বড় ভাই কৃষ্ণ কমল সেন ও সীমান্ত সেনের পক্ষে জুয়া খেলা পরিচালনাকারী বিপুল কান্তি বৈদ্যকে জুয়া খেলার প্রক্রিয়ায় সর্ম্পৃক্ততা থাকায় তাদেরকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আওতাধীন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসহ সকল স্থাপনায় ১০ বছরের জন্য প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করাসহ অবাঞ্চিত ঘোষণার সুপারিশ করা হয়।
আগামীতে সিজেকেএস ও সিডিএফএ’র সাথে সম্পৃক্ত কোন দল ও ক্লাবের কর্মকর্তা যাতে ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, সাধারণ সদস্য, নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সর্ম্পৃক্ত হতে না পারেন সে বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্য, নির্বাহী সদস্য ও আজীবন সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে সিজেকেএস ও সিডিএফএ’র কর্মকর্তা এবং তার আওতাধীন ক্লাব/সংস্থার কর্মকর্তা ও কোচ হতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
গত ১ জুন সন্ধ্যায় রেফারি সমিতি কার্যালয়ের উপরে নবগঠিত চট্টগ্রাম ফুটবল ট্রেনিং একাডেমির অফিসে জুয়ার আসর চলাকালে অভিযান চালিয়ে পৌনে ৭ লাখ টাকাসহ ১৯ জনকে আটক করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এ ঘটনার পর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ৯ সদস্যদের তদন্ত কমিটি। তারা সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যেই জমা দিতে সক্ষম হন।