এ জেড এম হায়দার »
বিশে^র নন্দিত ফুটবলার লিওনেল মেসি ব্যক্তিগত অর্জনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কাড়ি কাড়ি পুরস্কার এ ফুটবল জাদুকরের শো-কেজে উঠলেও দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক কোন ট্রফি জয় ছিল অধরা। অবশেষে ব্রাজিলের মারাকানায় তার সেই আক্ষেপের অবসান হয়েছে। উঠেছে কোপা আমেরিকান কাপ ২০২০ আসরের ট্রফি। আর এতে সতীর্থদের সাথে মুল ভ’মিকা রাখেন ডি মারিয়া ও সেমিফাইনালে জয়ের নায়ক গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকালে ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা হাতে তুলে নেন মেসি। জয়সূচক গোলটি করেন ডি মারিয়া। এর সুবাদে মেসির হাতে উঠলো দেশের হয়ে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা। খেলা শেষে পুরো দলের সদস্যদের থেকে মেসির আনন্দ-উল্লাস উপভোগের দৃশ্য ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি দলের প্রত্যেক সদস্যকে জড়িয়ে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে দেন। বন্ধু প্রতিপক্ষ নেইমার ও কোচ তিতেও ছুটে গিয়ে মেসিকে অভিনন্দন জানাতে কার্পন্য করেন নি। মাঠে নেইমার কাঁদলেও পরে ড্রেসিংরুমে গিয়ে মেসির সাথে বেশ কতক্ষন সময় কাটিয়েছেন।
সবশেষ ১৯৮৬ দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকাও জিতেছে আর্জেন্টিনা। ২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা ও ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও ট্রফি’র স্বাদ পায়নি মেসি। এবারের আসরে ব্যক্তিগত একাধিক পুরস্কারও উঠেছে আর্জেন্টাইনদের হাতে। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ কিপিং করার স্বীকৃতি হিসেবে মার্তিনেজের হাতে গেছে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। আর ফাইনাল সেরা’র ট্রফি গেছে ডি মারিয়ার হাতে। মেসি টুর্নামেন্ট সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতার ট্রফি পেয়েছেন।
নিজ মাঠে ম্যাচের শুরু থেকে প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখে। কিন্তু প্রতিরোধের মুখে গোলের দেখা পায়নি নেইমাররা। এরমধ্যে ২২ মিনিটে প্রাপ্ত প্রথম সুযোগ কাজে লাগিয়ে লিড নিয়ে স্বস্বিতে থাকে মেসিরা। সুন্দর এক আক্রমণ থেকে রদ্রিগো ডি পল ডানপ্রান্তে থ্রু বাড়ান, ব্রাজিল ডিফেন্ডার রেনান লোদি ব্যর্থ হলে ডি মারিয়া দেখেশুনে বা পায়ের ছোয়ায় আগুয়ান কিপার এডারসনের ফাঁকি দিয়ে বল জালে পৌঁছে দেন (১-০)। এর আগের খেলাগুলোতে দশ মিনিটের জন্য পরিবর্তিত হিসেবে নামা ডি মারিয়াকে কোচ লিওনেল স্কালোনি গনজালেজকে বসিয়ে প্রথম একাদশে রাখেন। ফাইনালে কোচের আস্থা তিনি পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বাকি সময় নিজের সেরাটা উপহার দেন। শেষ পর্যন্ত তার এ গোলই মেসির হাতে ট্রফি নিশ্চিত করে। এদিকে পিছিয়ে থেকে মরিয়া হয়ে প্রতিপক্ষের গোলমুখে গিয়েও ব্রাজিল জালের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিল না। আর বিশেষ করে
দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণাত্মক কৌশলে যায় আর্জেন্টিনা। অব্যাহত চেষ্টার পর ৫২ মিনিটে প্রাপ্ত সুযোগ পেয়ে রিচার্লিসন বল জালে জড়ালেও অফসাইডে থাকায় তা বাতিল হয়। তিন মিনিটের ব্যবধানে ফর্শে থাকা মার্তিনেজের অসাধারণ দৃঢ়তায় কপাল পুড়ে ব্রাজিলের। ডান দিক থেকে নেইমারের বাড়ানো বলে আবারো রিচার্লিসনের তীব্র গতির শট মার্তিনেজ প্রতিহত করেন। খেলার এ অবস্থায় দু’দলই তিনজন কওে পরিবর্তন আনে। একদিনে ব্রাজিলের সমতা ও অন্য দিকে আর্জেন্টিনার ব্যবধান বাড়ানোর পরিকল্পনা। ৭১ মিনিটে পাকুয়েতার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সমতা আনা হয়নি ব্রাজিলের।
৮৩ মিনিটের মাথায় ২৫ গজ দূর থেকে দানিলোর শট ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। দুই মিনিট পর নেইমারের কর্ণার থেকে থিয়াগো সিলভার নেয়া হেড জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। ৮৭ মিনিটে বারবোসার শট মার্টিনেজ প্রতিহত করলে হতাশা বাড়ে স্বাগতিক ক্যাম্পে। পরের মিনিটেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার। একেবারে বক্সেও ৬ গজ দূরত্বে ফাঁকায় বল পেয়েও ভারসাম্য রাখতে না পেরে মাটিয়ে পড়ে যাওয়ায় মেসি গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেন নি। শেষে ৫ মিনিট যোগ করা সময়েও প্রতিরোধ বজায় রেখে জয়ের উৎসবে মাতেন মেসি, ডি মারিয়া ও মার্তিনেজরা।