অধিবাসীদের রক্ষা করার উদ্যোগ নিন

সীমান্তে স্থল মাইন

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হচ্ছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আশাতলী, জামছড়ি, ফুলতলী ও জারুলিয়াছড়ি সীমান্তের মানুষ। আগে এসব সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নিয়ন্ত্রণ ছিল। ২০২৩ সাল থেকে এসব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, মাইন বিস্ফোরণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে শুধু নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৩ জন পা হারিয়েছেন। গত বছরে ১০টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় পা হারান ১০ জন। ২০২৩ সালে মাইন বিস্ফোরণে চারজন পা হারিয়েছেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পা হারিয়েছেন ৯ জন। ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে পা হারান ৮ জন। ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন ৩ জন, এর পরের বছরগুলোয় দুজন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে নিহত ব্যক্তিরা সবাই রোহিঙ্গা। এর বাইরে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আরও ছয়জনের আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ভালুকখাইয়া এলাকায় সীমান্ত পারাপারের সময় মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে একটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
২০২৩ সাল থেকে এসব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)। গত বছর বান্দরবান পার্বত্য জেলার সঙ্গে মিয়ানমারের ২১০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এর পর থেকেই স্থলমাইনের বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। গত সাড়ে আট বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, দোছড়ি, সদর এবং রুমার রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের অন্তত ৫৭ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫ জন, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৭ সালের আগে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল খুবই কম। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দুটি ঘটনা ঘটে। তখন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে বিজিবি থেকে মিয়ানমারের বিজিপির কাছে প্রতিবাদ জানানো হতো। তবে এখন সীমান্তের ওপারের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে থাকায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাইন বিস্ফোরণ সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে হচ্ছে। বিজিবির টহল ফাঁকি দিয়ে সেখানে গিয়ে লোকজন বিস্ফোরণে আহত হচ্ছেন, পা হারাচ্ছেন। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করলে সমস্যা হতো না। সীমান্ত এলাকার মানুষকে সব সময় সতর্ক করা হচ্ছে। যাঁরা শুনছেন না, তাঁরা হতাহত হচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার জাতিসংঘের মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেনি। মাইন ব্যবহারে তাদের জবাবদিহির বাধ্যবাধকতাও নেই। এরপরও আগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ করে বিজিপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হতো। কিন্তু এখন সীমান্তের পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় প্রতিবাদ ও আলোচনা করার সুযোগ নেই। তাই নিজেদের সতর্ক হতে হবে।
এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত সীমান্তে টহল জোরদার করা সে সঙ্গে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা। প্রয়োজনে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা তো সরকারেরই দায়িত্ব।