নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৫২ জন শ্রমিকের জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। পুড়ে অঙ্গার হয়েছে কোমল প্রাণ। স্বজনদের আহাজারি, ক্রন্দনে পরিবেশ ভারী আর বিষাদময় হয়ে উঠেছে। নিহতদের অধিকাংশ শিশু শ্রমিক বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এমডিসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানার ভবনটিতে আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ছিল না, জরুরি প্রয়োজনীয় পথও রাখা হয়নি, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা হয়নি। এত বড় ভবনে ২টি মাত্র সিঁড়ি রাখা হয়েছে। ৪ তলার গেট বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেরোতে পারেনি বলে তাদের অভিমত। শিল্প কারখানায় অগ্নিকা- কিংবা দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয় সেগুলির রিপোর্ট প্রকাশ পায় না। দুর্ঘটনা প্রতিকারে যেসব সুপারিশ তদন্ত কমিটি কর্তৃক করা হয় সে সবের আলোকে কোনোরূপ ব্যবস্থাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে- এমন প্রচেষ্টাও চোখে পড়ে না। দায়ীদের শাস্তি না হওয়া, প্রতিকারে সুপারিশসমূহ বিবেচনায় না নেওয়ার কারণে বারবার কলকারখানায় আগুন অথবা ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণ অকালে ঝরে পড়ে। দোষীদের শাস্তি না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও নানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অবেহলায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তা বলছেন, কারখানাটি পরিদর্শনের জন্য অনুমতি পাওয়া যায়নি, এটি কিভাবে মেনে নেওয়া যায়। একটি কারখানা মালিক নির্মাণ কোড না মেনে ভবন তৈরি করেছে, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োগ করেছে, কারখানার নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদি নেই- এতসব অনিয়মতো দীর্ঘদিনের। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি কেন? দেশের সর্বত্র আইন বিধি বিধান না মেনে কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। কারখানার নিরাপত্তা বা কর্ম পরিবেশের উন্নতি প্রথম বিবেচ্য অথচ আমাদের দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে কোন কারখানা মালিক বা কর্তৃপক্ষ সরকারি বিধিবিধান উপেক্ষা করে শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ করে তুলতে না পারে। আমরা চাই রূপগঞ্জের কারখানাটির অগ্নিকা-ের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশব্যাপী শিল্পকারখানার কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকটি নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হোক।